মহালছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির উদ্যেগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত, ইউপিডিএফ নিষিদ্ধের দাবি! - Southeast Asia Journal

মহালছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির উদ্যেগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত, ইউপিডিএফ নিষিদ্ধের দাবি!

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি, প্রসীত পন্থি সশস্ত্র উপজাতি আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ কর্তৃক নিজ জাতির কয়েক হাজার নিরীহ লোকজনকে হত্যা ও সম্প্রতি ঐক্যের নামে সাধারণ পাহাড়ীদের বিভ্রান্ত করে পাহাড় নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জেএসএস (এমএন লারমা) সমর্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির নেতৃবৃন্দ। ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলা সদরের পূর্ব ব্রীজ পাড়া সংলগ্ন একটি বাড়িতে সংগঠনটির মহালছড়ি শাখা কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় এ প্রতিবাদ জানান সংগঠনটির নেতারা।

এদিন দুপুর ২ টা থেকে আনুমানিক বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলা আলোচনা সভায় জেএসএস (এমএন লারমা) দলের মহালছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি নিলু রঞ্জন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষময় চাকমা, জেলা কমিটির সদস্য প্রিয় কুমার চাকমা, ইউপিডিএফ (গনতান্ত্রিক) দলের মহালছড়ি শাখার সভাপতি রবিন্টু চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিলন চাকমা, মহালছড়ি শাখার সভাপতি রতন চাকমা, জেএসএস (এমএন লারমা) সমর্থিত পিসিপির সভাপতি সুভাষ চাকমাসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, প্রসীত পন্থি ইউপিডিএফ বিভিন্ন দেশদ্রোহী কর্মকান্ডে সাধারন মানুষদেরকে জোর-জবরদস্তি করে ঐক্যের নামে মিছিল-মিটিং করছে, বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। ইউপিডিএফের উক্ত রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সংগঠনের সকল নেতা-কর্মীকে সজাগ থাকার আহবান জানান বক্তারা। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ইউপিডিএফের যেকোন অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র শক্ত হাতে রুখে দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারন করেন তারা। আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা, ইউপিডিএফ প্রসিত দলকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে তাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষনার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানিয়ে বলেন, “ইউপিডিএফ প্রসিত পন্থীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম গণবিরোধী। পাহাড় নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী ইউপিডিএফকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করা হোক।”

প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ও তৎকালীন শান্তিবাহিনী (বর্তমানে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস)’র শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই যুগের সশস্ত্র সংঘাতের অবসান হলেও চুক্তির পরপরই পাহাড়ে গড়ে উঠে আরেক সংকট- ‘ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত’। সেসময় পার্বত্য চুক্তির বিরোধীতা করেই পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে জন্ম নেয় পাহাড়ীদের আরেকটি নতুন দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। তাদের যুক্তি ছিলো, সরকারের সাথে পার্বত্য চুক্তি নয়, অস্ত্রের মাধ্যমে তারা পাহাড়ীদের অধিকার রক্ষা করবে। মূলত পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে ইউপিডিএফ এর জন্ম হলেও, চুক্তির বিরোধীতা না করে চুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি জানাতে থাকে সংগঠনটি। ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আনুষ্ঠানিক এক কনভেনশনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এবং বিরোধে জড়িয়ে পড়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর সাথে। পরবর্তীতে আবারো ভাঙনের মুখে পড়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন মূল জেএসএস। দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, স্বজন প্রীতি, সন্তু লারমার একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব সহ নানা বৈষম্যের অভিযোগে তৎকালীন জেএসএস নেতা রুপায়ন দেওয়ান, সুধা সিন্ধু খীসা, তাতেন্দ্র লাল চাকমাদের নেতৃত্বে গত ১০ এপ্রিল ২০১০ সালে গড়ে উঠে জেএসএস (এমএন লারমা) নামের নতুন আরেকটি সংগঠন।

এদিকে, প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের আদর্শের বুলি শুনে সে দলে ভিড়তে থাকা নেতারাও কয়েক বছর পর আদর্শের নামে রক্তপাত, এলাকার দখলদারিত্ব, দখল নিয়ন্ত্রনে রাখতে স্বজাতি হত্যা, নেতা-কর্মীদের সাথে বৈষম্য, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রতিপক্ষের কর্মসূচীতে বাধা প্রদানসহ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে নেতারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করছে অভিযোগ এনে ২০১৭ সালের ১৫ই নভেম্বর বেলা ১১টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ইউপিডিএফের প্রভাবশালী নেতা তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন সংগঠন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)।

ঐদিন তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেছিলেন, আন্দোলন পরিচালনার কৌশল সঠিক না হওয়ার কারণে ইউপিডিএফের অনেক নেতা-কর্মী দল ত্যাগ করেছেন। দল ত্যাগ করার অপরাধে অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রে গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, বলপ্রয়োগের রাজনীতি, চাঁদাবাজি, গুম, খুন, অপহরণ, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জাতীয় দিবস বর্জনের রাজনীতি করছে ইউপিডিএফ। তিনি বলেন, ‘ইউপিডিএফের অনেক নেতা এখন পকেট ভারী নেতা হিসেবে পরিচিত। মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি হয়ে নীতিহীন, আদর্শহীন, লক্ষ্যভ্রষ্ট, দুর্নীতিগ্রস্ত দলে পরিণত হয়েছে। এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদকারীদের আর্থিক দণ্ড ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ইউপিডিএফের বর্তমান নেতৃত্ব জুম্ম (পাহাড়ি) জনগণ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন।

দীর্ঘদিন বিরোধ থাকলেও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সাথে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ’র সম্পর্ক বর্তমানে বেশ হৃদ্যতাপূর্ণ বলে জানা গেছে। একটি সূত্রের দেয়া তথ্য মতে, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সাথে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ’র মধ্যে, নিজেদের মধ্যে রক্তপাত না ঘটনো এবং এলাকা ভাগাভাগি করে চাঁদাবাজি ও এলাকার নিয়ন্ত্রন ধরে রাখা নিয়ে একটি চুক্তি হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এই দুদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান বলে জানা গেছে।