সারা দেশে করোনার টিকাদান শুরু

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে টিকাদান কর্মসূচির সূচনা হয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি রোববার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালসহ সারা দেশের এক হাজারের অধিক হাসপাতালে কোভিড-১৯ টিকা দেয়া শুরু হয়। টিকা নিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত তিন লাখ ২৮ হাজারের অধিক মানুষ নিবন্ধন করেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার দেশের সব জেলায় টিকার ডোজ পাঠিয়েছে এবং কর্মসূচি পরিচালনার জন্য সরঞ্জাম ও বুথের ব্যবস্থাসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সেই সাথে টিকা প্রদানে স্বাস্থ্য কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সব ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

এদিকে, রাজধানীর মহাখালীতে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। রোববার সকালে তিনি টিকা নেন। এরপর এখানে আরও কয়েকজন মন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি টিকা নিয়েছেন। সকাল ৯টা থেকে সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে টিকাদান কার্যক্রম নিয়ে এক অনুষ্ঠানে অনলাইনে সারাদেশের সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে যুক্ত হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি টিকাদানের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত হন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, বছরব্যাপী টিকার কার্যক্রম চলবে। আমাদের টিকা আসতে ছয় মাস লাগবে। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকা আসবে। তিনি বলেন, টিকা নেওয়ার জন্য অ্যাপ আছে। তবে অ্যাপে সমস্যা হলে ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রেও টিকার নিবন্ধন করা যাবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পর কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্তলাল সেনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কেন্দ্র থেকে করোনার টিকা নেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ৭০ লাখ ডোজ রয়েছে এবং করোনার টিকা নিতে চাইলে www.surokkha.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে । সরকারের লক্ষ্য ছিল প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া। তবে, অনলাইনে নিবন্ধন সংখ্যা আশানুরূপ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে প্রথম মাসে ৬০ লাখেরও বেশি মানুষকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্তের পরিবর্তে ৩৫ লাখ লোককে টিকা দেওয়া হবে।

গত ২৭ জানুয়ারি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে পাঁচজনকে টিকা দেয়া হয়। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়। পরের দিন মন্ত্রিসভার প্রথম কোনো সদস্য হিসেবে করোনার টিকা গ্রহণ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

এদিকে, ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর (টাঙ্গাইল-৬) এক প্রশ্নের জবাবে অগ্রাধিকারী ভিত্তিতে কাদের কী পরিমাণ কোভিড-১৯ টিকা দেয়া হবে তা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভ্যাক্স সুবিধা থেকে বাংলাদেশ তার ৩ কোটি ৪০ লাখ লোকের বা জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা পাবে। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা গ্রুপের (এসএজিই) নির্দেশিকা এবং দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে টিকা গ্রহণকারী অগ্রাধিকার গোষ্ঠীগুলোর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রথম পর্যায়ে টিকা বিতরণে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের মোট ১ কোটি ৫০ লাখ লোক (জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ) দুই ডোজ টিকা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টিকাগুলো দেশের ৬৪ জেলা ইপিআই স্টোর এবং ৪৮৩টি ইপিআই স্টোরে সংরক্ষণ করা হবে।

উল্লেখ্য, ভারতের উপহার হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার ২০ লাখ ডোজ গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসে পৌঁছে। এরপর ২৫ জানুয়ারি সেরাম থেকে বাংলাদেশের ক্রয় করা কোভিশিল্ডের প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ নিরাপদে ঢাকায় আসে।