লকডাউন ভেঙে খাগড়াছড়িতে ডিসির পক্ষে মানববন্ধন, প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা
নিউজ ডেস্ক
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল এসএ টিভি কর্তৃক অপপ্রচার চালানো হয়েছে অভিযোগ এনে বেশ কয়েকটি সংগঠন মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় খাগড়াছড়ি জেলা শহরের শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধন থেকে এসএ টিভি কর্তৃপক্ষকে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের নিকট ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়, অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে হুঁশিয়ারি দেন আয়োজকরা।
বক্তারা বলেন, মুলত খাগড়াছড়িতে মৌসুমী ফল আম পরিবহণে কুরিয়ার সার্ভিসের অতিরিক্ত চার্জ নেওয়াকে কেন্দ্র কুরিয়ার চার্জ কৃষক, ব্যবসায়ীসহ সকলের কথা বিবেচনা করে সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করে দেয় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক।
এ বিষয়কে কেন্দ্র করে এসএ পরিবহণের দোষ ঢাকতে এক তরফা মিথ্যা বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে অপপ্রচার চালায় এসএ টিভি। প্রচারিত সংবাদে এসএ পরিবহণের অতিরিক্ত চার্জ আদায়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসকে দায়ী করে এক তরফা রিপোর্ট করে বেসরকারী টেলিভিশনটি।
নেতৃবৃন্দরা এতে বলেন, সংবাদে জেলা প্রশাসনের কোন বক্তব্যও নেওয়া হয়নি, যা নিয়ম বহি:ভূত। খাগড়াছড়ির মানবিক জেলা প্রশাসককের বিরুদ্ধে এ ধরনের ষড়যন্ত্র উদ্দেশ্য প্রণোদিত উল্লেখ করে অবিলম্বে মনগড়া এই সংবাদ প্রত্যাহারসহ এসএ টিভি কর্তৃপক্ষ ক্ষমা না চাইলে কঠোর আন্দোলন ও এসএ টিভি, এসএ পরিবহণসহ সংশ্লিষ্ট সব কিছু বয়কটের ঘোষনা দেয় মানববন্ধনে অংশ গ্রহণকারীরা।
মোঃ মেহেদী হাসান এর সঞ্চালনায় সচেতন খাগড়াছড়িবাসী ব্যানারে এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী এস.এম. নাজিম উদ্দিন। এতে বক্তব্য রাখেন এড. হেমন্ত ত্রিপুরা, জাগো সংগঠন-এর সভাপতি নয়ন বড়ুয়া, খাগড়াছড়ি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মোঃ আবু তাহের, সনাতন ছাত্র যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য, আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক শাহাদাৎ হোসেন কায়েশসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। এতে সংহতি প্রকাশ করেছে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব এর খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সেক্রেটারী প্রদীপ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।
এদিকে, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগের বিধিনিষেধের সঙ্গে আরও কিছু নতুন শর্ত যোগ করে ৩দিনে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল রোববার এই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
তিন দিনের এই লকডাউনের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে সরকারি ও বেসরকারি অফিস। এই সময় মার্কেট, শপিং-মল, বিনোদন কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। হোটেল রেস্তোরাঁ খোলা থাকলেও সেখানে বসে খাওয়া যাবে না।
এই লকডাউন শুরুর আগের দিনই বাংলাদেশে কোভিড আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। এদিন মারা গেছেন ১১৯ জন। আর লকডাউনের প্রথম দিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতেও ৯২ জনের করোনা টেষ্টে ২৯ জনের করোনা পজিটিভ ফলাফল এসেছে, যা মোট সংখ্যার ৩১.৫২ শতাংশ।
লকডাউনের প্রথম দিনে প্রশাসনের পক্ষ হতে কঠোর থাকার কথা থাকলেও জেলা প্রশাসকের পক্ষে লকডাউন ভেঙে মানববন্ধন করার বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা, প্রশ্ন উঠেছে লকডাউন বাস্তবায়নকারী প্রশাসনের ভূমিকায়ও।
এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা প্রশ্ন তুলেছেন জেলার সোশ্যাল এক্টিভিষ্টরা। স্থানীয়রা বলছেন, প্রজ্ঞাপন জারি করে লকডাউন ঘোষনা করার পরেও মানববন্ধনের অনুমতি ও মানববন্ধনে সামাজিক দূরত্ব না মানার পরেও প্রশাসনের নীরবতা রহস্যজনক।
এ বিষয়ে জানতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা মতিনকে কল করা হলে তিনি জানান, তিনি একটা মিটিং এ আছেন। কোন বিষয়ে কিছু জানার থাকলে তার অফিসে গিয়ে জানার কথা বলে তিনি কল কেটে দেন।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজ বলেন, লকডাউনে সভা-সমাবেশ করার বিষয়টা জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি দিয়ে থাকেন, এবিষয়ে পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা এবং গণপরিবহণ বা পথচারি চলাচলে সীমাবদ্ধতা বজায় রাখা।
তবে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের বক্তব্য জানতে জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের মুঠোফোনে কল করা হলে সংযোগ পাওয়া যায় নি এবং পরবর্তীতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সাঈদ এর সরকারী মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।