মিয়ানমারে পাঁচ মাসে ৭৫ শিশুকে হত্যা: জাতিসংঘ
নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর গত পাঁচ মাসে ৭৫ শিশুকে হত্যা করেছে জান্তা সরকার। জোরপূর্বক আটক রাখা হয়েছে প্রায় ১ হাজার শিশুকে। এসব শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সেবা থেকে। শুক্রবার এমনটা জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞরা।
জাতিসংঘ বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মানবেতর জীবন-যাপন করছে শিশুরা। প্রতিদিন সহিংসতা, নির্বিচারে গুলি ও গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হচ্ছে তারা। বাড়ছে শিশুদের মৃত্যুঝুঁকিও।
গত ফেব্রুয়ারিতে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় দেশটির গণতান্ত্রপন্থী নেতা অন সান সুচিকে। এরপর থেকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। দেশটিতে চলছে ব্যাপক বিক্ষোভ। যা দমনে নৃশংস হয়ে ওঠে সোনাবাহিনী।
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মানবাধিকার সংস্থা ও পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার মুখে রয়েছে জান্তা সরকার। ১ ফেব্রুয়ারির এ অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে গণতন্ত্রকামীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে সেনা প্রশাসন। যাতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১ হাজার জন। আটক রাখা হয়েছে ছয় হাজারের বেশি আন্দোলনকারীকে।
এমন পরিস্থিতিতে গত ১৮ জুন মিয়ানমারের ওপর অস্ত্রনিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটির জান্তা সরকারের প্রতি একটি নিন্দাপ্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে সেখানে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের ওপর অস্ত্রনিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে ১১৯টি দেশ। স্বৈরশাসিত বেলারুশই একমাত্র এর বিপক্ষে মত দেয়। আর চীন-রাশিয়াসহ মোট ৩৬টি দেশ প্রস্তাবে মতামত দেয়া থেকে বিরত থাকে। ঠিক তার কিছুদিন পরই রাশিয়া সফরে যাচ্ছে জান্তাপ্রধান।
এদিকে মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যূত নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে আরও চারটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আদালতে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্ডালের একটি আদালতে অভিযোগগুলো দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। এদিকে, সংঘাতপূর্ণ দেশটিতে দ্বন্দ্বমান পক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
নতুন এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে সু চির আইনজীবীরা বিস্তারিত তথ্য পাননি। শুধু জানা গেছে, সেগুলো দুর্নীতি সংক্রান্ত এবং এর মধ্যে দুটিতে সু চি সরকারের সাবেক মন্ত্রী মিন থুকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। নতুন মামলাগুলোর ফলে সু চিকে দেশটির তিনটি ভিন্ন শহরের আদালতের মোকাবিলা করতে হতে পারে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাচ্যূত হন সু চি। এরপর তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ওয়াকি টকি রেডিও আমদানি ও সংরক্ষণ এবং করোনাভাইরাস প্রোটোকল ভাঙার অভিযোগ আনা হয়। এছাড়াও ইয়াঙ্গুনের একটি আদালতে তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ভাঙারও অভিযোগ আনা হয়। এ অপরাধ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা হতে পারে।
তবে সবগুলো অভিযোগই মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তার আইনজীবীরা। এদিকে, নতুন করে আনা অভিযোগের বিষয়ে মুখ খোলেনি বর্তমানে দেশটির ক্ষমতায় থাকা সেনাবাহিনীও। সোমবার সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র শুধু বলেছেন, স্টেট কাউন্সেলর পদটি সৃজনের সময় সু চি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।