সীমান্ত সুরক্ষায় আরেক ধাপ এগিয়ে বিজিবি - Southeast Asia Journal

সীমান্ত সুরক্ষায় আরেক ধাপ এগিয়ে বিজিবি

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

চোরাচালান হচ্ছে- এমন খবর পেলেও সীমান্তের দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লেগে যেত দেশের সীমান্ত সুরক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের। দুর্গম পাহাড়ি পথে কখনও গাড়িতে, কখনও হেঁটে যেতে হতো এক তল্লাশি চৌকি থেকে অন্য চৌকিতে। সে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। যে কোনো ঘটনায় বিজিবি সদস্যরা এখন হেলিকপ্টারে চড়ে অতি দ্রুত পৌঁছে যেতে পারবেন সীমান্তের অতি দুর্গম এলাকায়। এজন্য বাহিনীর সদস্যদের দেওয়া হয়েছে হেলিকপ্টার থেকে ‘রেপেলিং অ্যান্ড ফাস্ট রোপিং’ প্রশিক্ষণ। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের সদস্যরা প্রথমবারের মতো পেয়েছেন এই প্রশিক্ষণ।

সীমান্তে শত্রু মোকাবিলায় বিজিবিতে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড ওয়েপনের প্রশিক্ষণও পেয়েছেন নতুন সদস্যরা। এই অস্ত্র দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সহজেই শত্রুপক্ষের ট্যাঙ্ক ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব। মর্টার কোর্স, মেশিনগান আর স্নাইপার কোর্সের মতো বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করছেন বিজিবি সদস্যরা। বিজিটিসিঅ্যান্ডসি থেকে শুধু মৌলিক প্রশিক্ষণই নয়, আন্তর্জাতিক মানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী গড়তে বিজিবি সদস্যদের এখন বিদেশেও প্রশিক্ষণে পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে প্রশিক্ষক নিয়ে এসেও দেওয়া হচ্ছে অত্যাধুনিক সব প্রশিক্ষণ। দেশের সীমান্তে নিশ্ছিদ্র সুরক্ষা নিশ্চিতে বাহিনীতে যুক্ত করা হচ্ছে নতুন জনবল। আরও দক্ষ ও চৌকস বাহিনী গড়তে সাতকানিয়া ছাড়াও চুয়াডাঙ্গায় বিজিবির আরেকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে।

বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্তের সুরক্ষা আরও বাড়াতে বাহিনীতে পাঁচ বছরের মধ্যে ১৫ হাজার নতুন সদস্য নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া নতুন বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) ও সীমান্ত রাস্তা তৈরি করে সীমান্ত সুরক্ষা আরও সুদৃঢ় করার কাজ এগিয়ে চলছে। ছয় বছর আগেও একটি বিওপি থেকে অন্য বিওপির দূরত্ব অন্তত ১৪ কিলোমিটার ছিল। বর্তমানে তা ১০ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হয়েছে। নতুন বিওপি নির্মাণ ও সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করে তা পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে নিয়ে আসার কার্যক্রম চলছে।

গত ১৭ জুলাই বিজিবির ৯৬তম নতুন রিক্রুট ব্যাচে ১২৮ জন নারী সৈনিকসহ দুই হাজার ৭৩৬ সদস্য ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করেন। নতুন এই ব্যাচ থেকেই প্রথমবারের মতো বিজিবি এয়ার উইংয়ের মাধ্যমে রেপেলিং অ্যান্ড ফাস্ট রোপিং প্রশিক্ষণ ও অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড ওয়েপনসহ অত্যাধুনিক সব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিজিবিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে একে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করা হয়েছে। বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবিকে আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় দিন দিন এ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আধুনিকায়ন হচ্ছে।

বিজিটিসিঅ্যান্ডসি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ সামনে রেখে বিজিটিসির রিক্রুট ট্রেনিং আধুনিকায়ন করা হয়েছে। নতুন রিক্রুটদের শারীরিক, রণকৌশল ও তাত্ত্বিক বিষয় সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ পাঠক্রম আধুনিকায়ন করা হয়েছে। স্মার্ট ডিজিটাল বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্যাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেমের সাহায্যে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে বিজিবির নতুন রিক্রুট সদস্যদের এটিভি, এপিসি, আরভি, হাই স্পিডবোটের (সিলভার ক্র্যাফট ও হারিকেন সান ওয়েপন) সঙ্গে অত্যাধুনিক সব প্রশিক্ষণ যুক্ত হয়েছে।

বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাসান উজ জামান বলেন, বিজিবি সদস্যদের সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে। অ্যাডভান্স ট্রেনিং ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে অন্যান্য প্রশিক্ষণের সঙ্গে বর্ডার ব্যবস্থাপনা, চোরাচালান দমনের প্রশিক্ষণ, নারী ও শিশু পাচার রোধ প্রশিক্ষণ, বিওপি কমান্ড প্রশিক্ষণ মর্টার কোর্স, স্নাইপার কোর্সসহ মেশিনগান কোর্সের মতো বিশেষায়িত কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিজিবি বর্তমানে ১৬টি সেক্টর, ৬১টি ব্যাটালিয়ন এবং বহুসংখ্যক বিওপির মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী-শিশু ও মাদক পাচারসহ যে কোনো ধরনের সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধের পাশাপাশি সরকারের নির্দেশে অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পেশাদারিত্বের পরিচয় দিচ্ছে বিজিবি।