সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে: সন্তু লারমা
নিউজ ডেস্ক
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) অভিযোগ করে বলেছেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। গত ২৩ বছরেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। বহুবার দাবি তুলে ধরা সত্ত্বেও চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সময়সূচিভিত্তিক কার্যকর পরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করা হয়নি।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সন্তু লারমা। আজ সোমবার এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ভার্চ্যুয়াল সভায় সন্তু লারমার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারী অধিকারকর্মী মেইনথেন প্রমীলা।
আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। এ বছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়: আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকারের আহ্বান’। ২০৩০ সালে শেষ হতে যাওয়া সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মূল স্লোগানের সঙ্গে মিলিয়ে এবারের আদিবাসীর দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে। এসডিজির মূল স্লোগান ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’।
সন্তু লারমা বলেন, করোনাকালে নৃগোষ্ঠী ও অন্যান্য প্রান্তিক মানুষ অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। সুচিকিৎসার অভাবসহ লকডাউনের কারণে নানা অর্থনৈতিক সংকটে এ প্রান্তিক মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা বলেন, সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সীমাহীন দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, দলীয় স্বজনপ্রীতি ও জবাবদিহির অভাবে প্রান্তিক মানুষ এসবের আশানুরূপ সুফল পাচ্ছে না। করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিবাসীদের বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সন্তু লারমা বলেন, সমতলের নৃগোষ্ঠীর জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করেনি। বাংলাদেশ বহু জাতির, বহু ভাষার, বহু সংস্কৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। এ দেশে বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠী ছাড়াও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ৩০ লাখের বেশি মানুষ স্মরণাতীতকাল থেকে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে তাদের জীবন, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আশা-আকাঙ্ক্ষা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিবাসীদের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, আজ প্রবল আগ্রাসনে তথা বিশ্বায়নের প্রবল জোয়ারে তাদের সেই পরিবেশবান্ধব সংস্কৃতি ও জীবনধারা বিপন্ন হতে চলেছে।
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আজকের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের নানা পর্বে আছে আলোচনা, সংগীত, নৃগোষ্ঠীর ভাষায় কবিতা আবৃত্তি। সকালের আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
আলোচকদের মধ্যে আছেন প্রবীণ রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, চাকমা সার্কেল প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত, সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, জোবাইদা নাসরীন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, অধিকারকর্মী দীপায়ন খীসা, সোহেল হাজং প্রমুখ।
সূত্র: প্রথম আলো।