ইউক্রেনের ২৩ হাজারের বেশি সেনা নিহত, ইইউ’র ১৮ কূটনীতিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা - Southeast Asia Journal

ইউক্রেনের ২৩ হাজারের বেশি সেনা নিহত, ইইউ’র ১৮ কূটনীতিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

যুদ্ধে ইউক্রেনের ২৩ হাজার ৩৬৭ জন সেনা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেঙ্কভ চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের সামরিক ক্ষয়ক্ষতিরও একটি হিসাব তুলে ধরেছেন। খবর স্পুতনিক নিউজের।

স্থানীয় সময় শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইগর কোনাশেঙ্কভ বলেন, যুদ্ধে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী, ন্যাশনাল গার্ড ও বিদেশি ভাড়াটে যোদ্ধারা যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তার নির্ভরযোগ্য হিসাব রয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে। ইউক্রেনের বাসিন্দাদের কাছে এসব তথ্য প্রকাশ করতে ভয় পান দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

আগের দিন শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জেলেনস্কি বলেছিলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া হামলা শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজারের মতো সেনা নিহত হয়েছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দেওয়া এ পরিসংখ্যানকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কোনাশেঙ্কোভ বলেন, রুশ অভিযানে শুধু মারিউপোল শহরেই চার হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন।

ইগর কোনাশেঙ্কভের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ১৩৪টি উড়োজাহাজ, ৪৬০টি ড্রোন (চালকবিহীন বিমান), ২৪৬টি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, ২ হাজার ২৬৯টি ট্যাংক ও অন্যান্য সামরিক যান, ২৫২টি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণব্যবস্থা, ৯৮৭টি কামান ও মর্টার এবং ২ হাজার ১৫৮টি বিশেষ সামরিক যান ধ্বংস করা হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় হামলায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে রসদ সরবরাহে নিয়োজিত একটি উড়োজাহাজ ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানান রুশ কর্মকর্তা কোনাশেঙ্কোভ। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ওই উড়োজাহাজে করে ইউক্রেনের ওডেসা শহরের কাছে বিপুল পরিমাণ পশ্চিমা অস্ত্র নেওয়া হচ্ছিল। এ ছাড়া ইউক্রেনের ১৫টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইগোর কোনাশেঙ্কোভ।

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘অবন্ধুসুলভ আচরণ’ এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইইউ’র ১৮ কূটনীতিককে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এর আগে রাশিয়ান স্থায়ী মিশনের ১৯ জন কর্মকর্তাকে ইইউ এবং ইউরাটম থেকে ‘অযৌক্তিক’ ভাবে বহিষ্কার করা হয়। এ বিষয়ে ‘তীব্র আপত্তি’ প্রকাশ করতে গতকাল শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান মার্কাস এডেরারকে ডেকে পাঠায় রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, কয়েক দশক ধরে দ্বিপাক্ষিক সংলাপ ও সহযোগিতার যে ভিত্তি তা ধারাবাহিকভাবে ধ্বংসের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন দায়ী।’

এডেরারকে ইইউ’র কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলার প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবন্ধুসুলভ আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে, ইইউ’র ১৮ কূটনীতিককে রাশিয়ায় ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে তাদের রাশিয়ান ফেডারেশন অঞ্চল ছেড়ে যেতে হবে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন মস্কোর এই উদ্যোগকে ‘অযৌক্তিক, ভিত্তিহীন সিদ্ধান্ত’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। ইইউ ব্লকের মুখপাত্র পিটার স্ট্যানো বলেছেন, এই আচরণ ছিল ‘সম্পূর্ণ প্রতিশোধ’ যা ‘শুধুমাত্র রাশিয়াকে আরও গভীরভাবে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করবে।’

স্ট্যানো টুইটা বার্তায় বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ক্রেমলিনকে আন্তর্জাতিক নিয়ম এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক পদ্ধতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানায়।’

এর আগে ৫ এপ্রিল, ইইউ রাশিয়ার ১৯ জন কূটনীতিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। তখন বলা হয় বলে যে ‘তারা কূটনৈতিক মর্যাদার বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত ছিল।’

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ইইউ এর প্রতিক্রিয়ায় ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ আশা করা উচিত।

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর ইইউ কূটনীতিকদের বহিষ্কারের শুক্রবারের খবর রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে চলমান কূটনৈতিক সংঘাতের সর্বশেষ ফলাফল। কয়েক ডজন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং রাশিয়া সতর্ক করেছে যে প্রতিটি বহিষ্কারের প্রতিশোধ নেওয়া হবে।