জলবায়ু নরকের মহাসড়কে বিশ্ব, জাতিসংঘ মহাসচিবের সতর্কবার্তা - Southeast Asia Journal

জলবায়ু নরকের মহাসড়কে বিশ্ব, জাতিসংঘ মহাসচিবের সতর্কবার্তা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

আজ (৭ নভেম্বর) মিসরের শারম-আল-শেখে বসেছে ঐতিহাসিক জলবায়ু সম্মেলনে কপ-২৭। রাজধানী কায়রোতে সম্মেলনে অংশ নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরস সতর্ক করে বলেছেন, ‘জলবায়ু নরকের মহাসড়কে আমরা’।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে করণীয় নিয়ে মিসরে জড়ো হচ্ছেন বিশ্বনেতারা। বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্প, বন্যা-খরা, জলোচ্ছ্বাস বৃদ্ধি ঠেকাতে এবারের সম্মেলনে তহবিল গঠনে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন, প্রতিনিধিরা সেদিকে তাকিয়ে।

সম্মেলনে রবিবার (৬ নভেম্বর) জাতিংঘ মহাসচিব বলেন, আর কিছু দিনের মধ্যেই আমাদের বিশ্বের জনসংখ্যা নতুন সীমা অতিক্রম করবে। আমাদের সদস্য সংখ্যা আট বিলিয়ন হতে যাচ্ছে।

ভাষণে গুতেরেস আরও বলেন, যেই শিশুটি আসছে তাকে কী বলবো, যখন জিজ্ঞাস করবে আমরা পৃথিবীর জন্য কী করেছি? আমরা আমাদের জীবনের সঙ্গে লড়াই করছি আর হেরে যাচ্ছি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমরা যে শঙ্কা করছি ওই বিন্দুর দিকেই যাচ্ছি। আমরা জলবায়ু নরকের মহাসড়কে আছি।

জলবায়ু সম্মেলনে সেনাগাল এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সল, মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসি, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাক, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ অনেককেই দেখা যায়। সবাই জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় নিজেদের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরবেন।

২৭তম জলবায়ু সম্মেলন, যার আনুষ্ঠানিক নাম কনফারেন্স অব পার্টিজ-২৭ বা কপ-২৭। এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে ১৯৮টি দেশের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। জাতিসংঘের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও পরিবেশ কর্মীরাও রয়েছেন। কাবর্ন নিঃসরণে এবার জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখা প্রধান চ্যালেঞ্জ বিশ্বনেতাদের সামনে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, চলতি শতাব্দীতে গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে মারাত্মক খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে বিশ্ববাসী।

প্রতিশ্রুত অর্থ দেওয়ায় অনেক পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো
এবারের আলোচনায় উন্নত দেশগুলোর কাছে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলো ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেখান থেকে তারা অনেক পিছিয়ে আছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ কার্বন নিঃসরণ। যেসব দেশে কার্বন নিঃসরণ বেশি হয়, সেসব দেশ কম কার্বন নিঃসরণ করেও ক্ষতির মুখে পড়া দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণের এ অর্থ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এসব দেশ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এবারের কপ-২৭ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত এসব দেশের পক্ষ থেকে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে সোচ্চার হওয়ার দাবি উঠেছে।

উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তন ক্ষতিপূরণ তহবিলে ১০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের—বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২০ সালে দেশটি মাত্র ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। গত বছরের এ হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা তাদের প্রতিশ্রুত অর্থের মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ দিয়েছে। এদিকে যুক্তরাজ্যও এখনো এক-তৃতীয়াংশ অর্থ ছাড় করেনি।

এবারের জলবায়ু সম্মেলনেও ক্ষতিপূরণ বিষয়টি নিয়ে অগ্রগতির তেমন কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীতে যে জরুরি পরিস্থিতি চলছে, তার পেছনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর দায় সামান্যই। তবে ধনী দেশগুলোর তহবিল বরাদ্দের মাধ্যমে বৈশ্বিক এ সংকট মোকাবিলায় সব দেশের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে একটা আস্থার সম্পর্ক তৈরি হবে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর টিকে থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার বিষয়টি ধনী দেশগুলো মেনে নিয়েছে। সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পূরণ করছে না তারা।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রাও বাড়ছে। কার্বন নিঃসরণ কমানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে বাঁচাতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ধনী দেশগুলো ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যদিও এ অঙ্ক প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করছে না। এতে এ সংকট মোকাবিলার বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই।

গত সপ্তাহে এ বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেসব প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কতটা ঝুঁকির মুখে আছে বিশ্ব। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখার যে সিদ্ধান্তে সব দেশ একমত হয়েছিল, সে বিষয়ে বিশ্বাস করার মতো কোনো অগ্রগতি এখনো হয়নি। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কথাতেও সংকটের বিষয়টি উঠে এসেছে।

গুতেরেস বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কোটি কোটি মানুষকে বাঁচানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এ খাতে বিশ্বের বিনিয়োগ আরও অনেক বাড়াতে হবে।’ এদিকে পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু প্রভাব এতটা গুরুতর পর্যায়ে চলে গেছে, এখন কোনো পদক্ষেপ নিয়ে তা ঠেকানো যাবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এখন দুর্যোগের কবলে পড়লে ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলার জন্য অর্থও চাইবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো।