কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে প্রথম যৌথ অভিযানে ধরা পড়েনি কোনো সন্ত্রাসী - Southeast Asia Journal

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে প্রথম যৌথ অভিযানে ধরা পড়েনি কোনো সন্ত্রাসী

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে।

গত ২৬ আগস্ট শনিবার প্রথম দিনের অভিযানে কোনো সন্ত্রাসী ধরা পড়ার খবর পাওয়া যায়নি। ইয়াবা কিংবা অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। রোহিঙ্গা নেতারা (মাঝি) বলছেন, অভিযানে নামার খবর আগেভাগে ছড়িয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা আশ্রয়শিবির থেকে পালিয়ে পাশের পাহাড়ের আস্তানায় আত্মগোপন করেন।

প্রথম এই যৌথ অভিযানে জেলা প্রশাসন এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), জেলা পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর ২৭০ জন সদস্য অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে এপিবিএনের ১০০ জন, র‍্যাবের ৪০, বিজিবির ৪০, জেলা পুলিশের ৪০ এবং আনসারের ৫০ জন সদস্য ছিলেন।

গতকাল বেলা দুইটার দিকে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) অভিযান শুরু হয়। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরের মধ্যে বালুখালীর এই আশ্রয়শিবিরেই গোলাগুলি, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগে আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাবসতি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এই আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা), আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারেটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনীর অবস্থান রয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিদিন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি-সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। তবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার অভিযানে একজন সন্ত্রাসীকেও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ জানায়, সবশেষ গত মঙ্গলবার রাতে এই বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮) আরসার সন্ত্রাসীরা মো. ইউসুফ (১৬) নামের এক রোহিঙ্গা কিশোরকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মাদ্রাসাছাত্র ইউসুফ আরএসওর সদস্য ছিল।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য মতে, গত ৮ মাসে আশ্রয়শিবিরগুলোয় ৫১টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৬০ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। অধিকাংশ খুনের ঘটনা আরসার সঙ্গে আরএসও এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনীর মধ্যে। সংঘর্ষে আরসার ১৮ সদস্য ও আরএসওর ২ জন নিহত হন। আর রোহিঙ্গা ঢলের ছয় বছরে আশ্রয়শিবিরগুলোয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি এবং পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ১৮৯ রোহিঙ্গা।

আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়শিবিরের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারে গতকাল থেকে যৌথবাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযানে এপিবিএন, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনী রয়েছে। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন যৌথবাহিনীর এই অভিযান চালানো হবে।

র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়ার পালংখালীতে অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানের তৈরি একটি রিভলবারসহ আরসার অর্থসম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুসকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ইউনুস উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের গড়ে তোলা মক্তব-মাদ্রাসার রোহিঙ্গা শিক্ষকদের সংগঠন (একাংশের) ওলামা কাউন্সিলের কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের বাসিন্দা ইউনুস উখিয়ার থায়ংখালী তাজনিমার খোলা আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৯) সি-১৩ ব্লকে শরণার্থী হিসেবে থেকে আরসার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন।

র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুস সালাম চৌধুরী বলেন, র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইউনুস স্বীকার করেন—বর্তমানে আরসার সদস্যদের কাছে ২০টি টাইপ-৭৪ এলজি, জেআরজি অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণে হাতবোমা (হ্যান্ড গ্রেনেড) রয়েছে। আরসা, আরএসও, নবী হোসেন ও মুন্নাবাহিনীর সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার যৌথবাহিনীর মূল লক্ষ্য।