রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাপানের প্রচেষ্টা জোরদার হবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক
অবকাঠামোগত উন্নয়নে জাপানের অব্যাহত সহায়তার প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। সেইসাথে মিয়ানমারের সাথে তাদের সুসম্পর্ক থাকায় রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাপানের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কবিষয়ক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আশা করি জাপান রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে প্রচেষ্টা আরো জোরদার করবে।’
শনিবার (২৬ আগস্ট) প্যান-এশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিএআরআই) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে জাপান দূতাবাসে আয়োজিত আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
জাপানে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত জামিল মজিদ ও আশরাফ-উদ-দৌলা, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. লাইলুফার ইয়াসমিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় শাখার পরিচালক সায়েম আহমেদ, জাইকা বাংলাদেশের সিনিয়র প্রতিনিধি ইজি ইয়ামাদা, ঢাকায় জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (জেসিআইএডি) সভাপতি তেতুরো কানো এবং প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) মহাসচিব মো: আনোয়ার শহীদ।
অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার আলম মাতারবাড়ী প্রকল্পে বিনিয়োগ এবং ক্রমবর্ধমান জাপানি কোম্পানির উপস্থিতি ও সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।৫ তিনি বলেন, ‘আমরা জাপানের সমর্থিত এই অবকাঠামো প্রকল্পগুলোকে দেশ ও জনগণের অনেক সমস্যার সমাধান হিসেবে মনে করছি।’
এর আগে বাংলাদেশ সরকার জানায়, প্রতি বছর রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় ৩০ হাজার শিশুর জন্ম এবং রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অনেক কমে যাওয়ায় এই সঙ্কট আরো জটিল হয়ে উঠেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন শুরু করতে আরও দেরি এবং মানবিক সহায়তার ঘাটতি পুরো অঞ্চলকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। মন্ত্রণালয় বলেছে, ১ দশমিক ২ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে এত দীর্ঘ সময় আশ্রয় দেয়ার আর্থ-সামাজিক, জনসংখ্যাগত ও পরিবেশগত ব্যয় বাংলাদেশকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিরাপদ ও স্থায়ীভাবে তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা ও অধিকার রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জনগুলো অসাধারণ এবং এ ধরনের অর্জন কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে।
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। গত ৫০ বছরে আমরা যা অর্জন করেছি তা আরো বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রতি জনগণের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এটা (লক্ষ্য অর্জন) সহজ হবে না। একমাত্র জাপানের মতো বন্ধুরা আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও জাপান অবশ্যই সম্মিলিতভাবে কাজ করবে এবং উভয় দেশ ও তাদের জনগণের জন্য পারস্পরিক কল্যাণকর ভবিষ্যৎ অর্জনের যাত্রায় এক থাকবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বর্তমানে শুধু একটি জিটুজি (সরকার-থেকে-সরকার) অংশীদারিত্ব রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এটি প্রতিদিনই বাড়ছে এবং বর্তমানে এর মধ্যে সিটুসি (দেশ থেকে দেশে), পিটুপি (জনগণ থেকে জনগণ) এবং বিটুবি (ব্যবসা-থেকে-ব্যবসায়) সম্পর্ক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে পিটুপি অংশীদারিত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’
এ ব্যাপারে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়নে সদ্য চালু হওয়া থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পিএআরআই উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তিনটি দিক দিয়েই সমৃদ্ধ আমাদের দেশ জাপানের জন্য একটি বিশাল বাজার হিসেবে বিবেচিত।’
রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি বলেন, এই অঞ্চলে এবং এর বাইরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা জাপান ও বাংলাদেশের সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য।
তিনি বলেন, এটি করার জন্য উভয় দেশই সহযোগিতা, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলায় একসাথে কাজ করার উপর জোর দেয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এর ফলে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগযোগ ও সার্বিক সম্পর্কের উন্নতি হবে।
বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূতের মতে, পিএআরআই এবং অনুরূপ গবেষণা প্রতিষ্ঠান জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করতে পারে।
এছাড়া নতুন সুযোগ-সুবিধা জাপানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত করবে বলেও জানান তিনি। অনুষ্ঠানে বক্তারা জাপান-বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদারিত্বকে বাস্তবায়িত করার মূল চাবিকাঠি হিসেবে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগকে তুলে ধরেন।
তারা বলেছে, প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) বাণিজ্য বাধা, বিনিয়োগবান্ধব ব্যবসায়িক পরিবেশ, জনশক্তি অভিবাসনের সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য দক্ষতা উন্নয়ন, সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা ও সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে জাপানের সহায়তাও লক্ষ্য করা উচিৎ।
বাংলাদেশে আয়োজিত ‘ম্যাটেরিয়ালাইজিং জাপান-বাংলাদেশ স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপ: ডিপ্লোম্যাটিক, ইকোনোমিক অ্যান্ড পিপল টু পিপল রিলেশনস’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে জাপানভিত্তিক মাল্টিমডেল এশিয়া ও প্যাসিফিককেন্দ্রিক থিঙ্কট্যাঙ্ক পিএআরআই এর কার্যক্রম শুরু করা হয়।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) পরিচালক (স্থানীয় বিনিয়োগ প্রচার) মো. আরিফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ আনসারুল আলম, বাংলাদেশ ইকেবানা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিনুর বেবি, কোকোরোজাশি জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের অধ্যক্ষ ওকাবায়াশি কুনিয়াকি, হিরোকি ওয়াতানাবে ইকেবানা, কাজুকো ভূঁইয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সিনিয়র নিউজ কনসালটেন্ট এম আমিনুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ফাহমিদা বিনতে ফারুকসহ অন্যরা চারটি ভিন্ন সেশনে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
পিএআরআই-এর সভাপতি ইউজি আন্দো, পিএআরআইয়ের সহসভাপতি তারেক রাফি ভূঁইয়া জুন এবং পিএআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আবদুল্লাহ-আল-মামুন সেশন পরিচালনা করেন।
বিশিষ্ট জাপানি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, আমলা, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং যুব সংগঠনের প্রতিনিধিসহ অনেক প্যানেলিস্টও ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে যোগ দেন।
পিএআরআই প্যান-এশিয়া অঞ্চলের পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আর্থ-সামাজিক, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং দ্বিপক্ষীয় পাশাপাশি বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক বিষয়গুলোর সম্পূর্ণ ধারার উপর বহু-স্টেকহোল্ডার গবেষণা ও বিশ্লেষণমূলক কাজ করে।