ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৬ বছরে দেড় হাজার খুন - Southeast Asia Journal

ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৬ বছরে দেড় হাজার খুন

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

ফিচার ডেস্ক

শান্ত-সবুজের উঁচু-নিচু পার্বত্য জনপদ, দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে অপার সম্ভাবনা শোভা মেলে ধরেছে। ঐতিহাসিক ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র পর পার্বত্য জনপদেও লেগেছে উন্নয়ন-আধুনিকতার ব্যাপক ছোঁয়া। অথচ সেই সবুজ-সম্ভাবনার পাহাড়ে এখনও বিরাজ করছে চাপা আতঙ্ক। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে যেকোনো নাগরিক নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারলেও পার্বত্য অঞ্চলে বিরাজ করছে ভিন্ন চিত্র। দুর্গম এলাকাগুলোতে অস্ত্রবাজির মাধ্যমে ভীতিকর এক পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। দেশের এক-দশমাংশ এই পার্বত্য অঞ্চলের আধিপত্য ধরে রাখতে রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও নিরীহ বাসিন্দাদের ওপর প্রায় নেমে আসছে হত্যা, জুলুম-অত্যাচার।

এমনকি কোনো কোনো সময় এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠছে যে, পার্বত্য আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনী, বিজিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর থেকে বিগত এই ২৬ বছরে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন ১ হাজার ৩৯০ জন। যার মধ্যে সামরিক বা বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ৩৫ জন এবং বেসামরিক নাগরিক ১ হাজার ৩৫৫ জন। নিহত এই বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে উপজাতি ৯৩৮ জন এবং বাঙালি ৪১৭ জন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া ২৬ বছরে অপহরণের শিকার হয়েছে ২ হাজার ২৮৩ জন। যাদের মধ্যে উপজাতি ১ হাজার ৫৫৭ জন এবং বাঙালি ৭২৬ জন।

তথ্য মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েকটি আঞ্চলিক সংগঠনের সশস্ত্র তৎপরতার মাধ্যমে বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকার বিরাট অঙ্কের চাঁদাবাজি চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এই চাঁদাবাজি ও আধিপত্য ধরে রাখতে উপজাতি সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়তই খুন, চাঁদাবাজি এবং অপহরণের ঘটনা ঘটায়। এতে করে দুর্গম এলাকাগুলোতে নির্ভয়ে-স্বাভাবিক চলাচল করতে পারে না কেউ। গত বছরের অক্টোবর থেকে বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র শাখা কেএনএর সন্ত্রাসী তৎপরতায় বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল ওই এলাকায়। যার রেশ এখনও কিছু কিছু এলাকায় রয়ে গেছে। অনেক সাধারণ পাহাড়ি বাসিন্দাও জীবন বাঁচাতে নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল।

গত সপ্তাহে সরেজমিন পার্বত্য বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি রাঙামাটি জেলার বরকল, রাজমনি পাড়া, শুভলং এবং নানিয়ারচরে কথা হয় স্থানীয় পাহাড়ি এবং বাঙালি বাসিন্দাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। স্থানীয় ওইসব বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তথ্য মতে, বান্দরবানে কেএনএফের তৎপরতা বেশি। এ ছাড়া খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির দুর্গম এলাকাগুলোতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের প্রধান আঞ্চলিক সংগঠন সন্তু লারমার নেতৃত্বধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং প্রসীত খিসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (্ইউপিডিএফ)। এ ছাড়াও আরও তিনটি সংগঠনের সন্ত্রাসী তৎপরতা এখানে দৃশ্যমান আছে। সেগুলো হলো-জেএসএস (সংস্কার), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এবং মগ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এমএনপি)। এসব সংগঠন পার্বত্য অঞ্চলে জনসম্মুখে পাহাড়িদের সংস্কৃতি ও অধিকার নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলেও নেপথ্যে তাদের সশস্ত্র শাখা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য। পাহাড়ের এমন কোনো কৃষিপণ্য নেই বা দোকানপাট, যানবাহন ও স্থাপনা নেই যেখানে আঞ্চলিক সংগঠনের সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হয় না। চাঁদা না দিলেই গুলি-হতাহতের ঘটনা ঘটায় তারা। তবে এসব বিষয়ে জেএসএস প্রধান সন্তু লারমার সঙ্গে সরাসরি ও মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, আঞ্চলিক সংগঠনগুলো নিজেদের আধিপত্য ও সুবিধার জন্য পার্বত্য অঞ্চলে অশান্তি-নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রেখেছে। আঞ্চলিক সংগঠনগুলো শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি বলে যে ধোঁয়া তুলে থাকে, সেগুলো মূলত তাদের দিক থেকেই হয়নি। সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তির অধিকাংশ উপধারা বাস্তবায়ন করেছে। তা ছাড়া এখন পাহাড়ি ও বাঙালিরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। যেভাবে পার্বত্য অঞ্চলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে, এসব দেখে আর কেউই আঞ্চলিক সংগঠনের উসকানি-প্রলোভনে পাত্তা দেয় না। দেশের কতিপয় বুদ্ধিজীবীকে ব্যবহার করে মিথ্যাচার করছে তারা।

পার্বত্য ওই আঞ্চলিক সংগঠনগুলো যতটুকু যা করছে সেগুলো অস্ত্রের মুখে নিরীহদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা মাত্র। দুর্গম এলাকাগুলোতে তারা এখনও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে।

গবেষণার কাজে সম্প্রতি সরেজমিন পার্বত্য অঞ্চল পরিদর্শন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে মূলত আঞ্চলিক সংগঠনগুলো তাদের আধিপত্য ও চাঁদাবাজির কার্যক্রম ধরে রাখতে সশস্ত্র শাখার মাধ্যমে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। তারা এখানে কোনোভাবেই রাস্তাঘাট, অবকাঠামোগত উন্নয়ন চায় না। কেননা এ অঞ্চল যত উন্নত হবে, যোগাযোগব্যবস্থার প্রসার ঘটবে ততই এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে। পার্বত্য জেলাগুলোর শহর বা বাজারকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তুলনামূলক কম হলেও দুর্গম এলাকাগুলোতে এখনও ব্যাপকহারে তারা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আগের চেয়ে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে এসব বিষয়ে সচেতনতাও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক আরও বলেন, আঞ্চলিক সংগঠন ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈরী ও পরস্পর বিদ্বেষমূলক পরিস্থিতি বিদ্যমান। যে পরিস্থিতি প্রায়ই ভয়ানক বা সহিংস রূপ নেয়।

এ বিষয়ে নিজ কার্যালয়ে রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মীর আবু তৌহিদ বলেন, পার্বত্য এ অঞ্চলে চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজির বিষয়টি আছে। এ ক্ষেত্রে আমরা যখনই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই, তখনই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তবে সার্বিকভাবে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব সংস্থার সঙ্গে সুন্দর সমন্বয় করে আমরা এখানে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর সরকার অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু চুক্তির অন্যপক্ষ জেএসএসের জন্য দুটি ধারা তথা অস্ত্র জমা ও আত্মসমর্পণ করার বিষয় থাকলেও সেটা তারা বাস্তবায়ন করেনি। জেএসএস প্রধান সন্তু লারমা বলে থাকেন, তাদের কোনো সশস্ত্র গ্রুপ নেই। তা হলে অভ্যন্তরীণ খুনোখুনি, এতসব অত্যাধুনিক অস্ত্র যেগুলো আমরা দেখি বা শুনি এগুলো কারা বা কে করছে? অভ্যন্তরীণ খুনোখুনি, চাঁদাবাজি তো হচ্ছে, সেটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সাধারণভাবে চিন্তা করলেই আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর দুই রূপ আমরা দেখতে পাই। একটি হলো প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, অন্যটি অপ্রকাশ্য সশস্ত্র কর্মকাণ্ড।

রাঙামাটিতে কথা হয় কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অংসু চেন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, পার্বত্য আঞ্চলিক সংগঠনগুলো জুমল্যান্ডের মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে এখানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ভিন্নপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অস্ত্রের মুখে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তারা এখানে জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিকে প্রতিহত করার জন্য সব ধরনের তৎপরতা চালিয়ে থাকে। এখানে কয়েক বছরে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। আমি নিজেও হামলার শিকার হয়ে দেড় বছর ধরে নিজ বসতভিটা ছেড়ে শহরে আছি। অনেকটা ওই আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানোর মতো অবস্থা। এ ক্ষেত্রে সাধারণ পাহাড়িদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কথামতো না চললে তাদের জন্য কঠিন বিপদ।

পার্বত্য অঞ্চলে হতাহতের পরিসংখ্যান যা বলছে
স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্ত ৫২ বছরে পার্বত্য অঞ্চলে আঞ্চলিক সংগঠনের সশস্ত্র সংঘাতে ৩ হাজার ২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২ হাজার ৬৪৮ জন বেসামরিক নাগরিক এবং সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর বাকি ৩৫৪ জন। এ ছাড়া পার্বত্য শান্তি চুক্তির আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ২৯৩ জন এবং পার্বত্য চুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৬ বছরে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৩৯০ জন। যার মধ্যে সেনাবাহিনীর ১১ জনসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য রয়েছেন ৩৫ জন এবং বেসামরিক নাগরিক ১ হাজার ৩৫৫ জন। নিহত এই বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে উপজাতি ৯৩৮ জন এবং বাঙালি ৪১৭ জন।

শান্তি-স্থিতিশীলতার অন্তরায় সশস্ত্র তৎপরতা
বিশেষজ্ঞরা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন করে। কিন্তু নামকাওয়াস্তে কিছু অস্ত্র সমর্পণ করে কিছু শান্তি বাহিনীর সদস্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেও অধিকাংশই অস্ত্র জমা বা স্বাভাবিক জীবনে ফেরেনি। উপরন্তু ওই অস্ত্রের সঙ্গে নতুন নতুন আরও বিপুল আধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জাম যুক্ত হয়েছে এসব আঞ্চলিক সংগঠনে। ওই চুক্তির পুরস্কার হিসেবে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন। এতকিছুর পরেও পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে দেশীয় ও ভূ-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে জেএসএস, ইউপিডিএফ ও কেএনএফসহ আঞ্চলিক সংগঠনগুলো। পাহাড়ে সংকট জিইয়ে রাখতে সরকারের বিরুদ্ধে বা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও নানা সময়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে এনজিও দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে কৌশলে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও প্রচারণা চালানো হয়ে থাকে। পাহাড়কে অশান্ত রাখতে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনগুলো।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রেক্ষাপট
স্বাধীনতা সংগ্রামের পরবর্তী সময়ে কিছু পাহাড়ি উপজাতীয় নেতা অধিকার আদায়ের নামে ১৯৭৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন করে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহিদ হওয়ার পর দেশের রাজনীতির পট-পরিবর্তন হলে ১৯৭৬ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নেয়। ১৯৭৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির গঠিত সশস্ত্র সামরিক শাখা ‘শান্তি বাহিনী’ সর্বপ্রথম সেনাবাহিনীর ওপর হামলা করে। প্রায় দীর্ঘ দুই যুগ ধরে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী ও শান্তিবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে বহু সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত এবং আহত হয়। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে তখন জনসংখ্যা সমস্যার পরে দুই নম্বর জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন করে। এর মাধ্যমে নামকাওয়াস্তে কিছু অস্ত্র সমর্পণ করে কিছু শান্তি বাহিনীর সদস্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেও অধিকাংশই অস্ত্র জমা বা স্বাভাবিক জীবনে ফেরেনি।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, উপজাতীয় নেতাদের শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (বর্তমানেও প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা যুগান্তকারী এক পদক্ষেপ নিয়ে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করেন। ওই চুক্তির আলোকে পার্বত্য এলাকায় এখন সমতলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া পার্বত্য শান্তি চুক্তির ৭২টি ধারার সর্বমোট ৯৮টি উপধারা আছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-যার মধ্যে ইতিমধ্যেই ৮৬টি উপধারা সরকার সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেছে। এ ছাড়া চারটির আংশিক বাস্তবায়িত এবং ৮টির বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। অন্যদিকে চুক্তির অন্যপক্ষ জেএসএস তথা সন্তু লারমার দুটি ধারা বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। যদিও জেএসএস ভিন্ন দাবি করে থাকে।