বাংলাদেশের নৌ-সীমান্তে নতুন ব্যাটালিয়ন নামাচ্ছে বিএসএফ! - Southeast Asia Journal

বাংলাদেশের নৌ-সীমান্তে নতুন ব্যাটালিয়ন নামাচ্ছে বিএসএফ!

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

বিএসএফ বলছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের নদীপথ দিয়ে সশস্ত্র দুষ্কৃতি বা জঙ্গিরা যাতে ভারতে না ঢুকতে পারে, তারই আগাম সতর্কতা হিসাবে একটি নৌ ব্যাটালিয়ন গড়তে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুমোদন চেয়েছে।

নদী-সীমান্তে পাহারা দেওয়ার জন্য এখন যে ভাসমান সীমান্ত-চৌকি আর দুই-তিন ধরনের জলযান রয়েছে, নতুন ব্যাটালিয়নে সেগুলোর সঙ্গেই যোগ হবে আরও আধুনিক জলযান ও সরঞ্জাম।

এই বিশেষ বাহিনীটি বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের অধীনে কাজ করবে এবং বঙ্গোপসাগর থেকে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাহারা দেবে।

কেন নৌ ব্যাটালিয়ন?
“ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সুন্দরবনের অবস্থানটা কৌশলগত ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অসংখ্য দ্বীপ আর নদী-নালা-খাল ভরা এই অঞ্চল দিয়ে অনুপ্রবেশ বা চোরাচালান যেমন নিয়মিত চলতে থাকে, তেমনই কোনও জঙ্গিও প্রবেশ করে যেতে পারে ভারতে।”

“মুম্বাই হামলার আগে পাকিস্তান থেকে আজমল কাসভরা তো জলপথেই ভারতে এসেছিল। তাই এই অঞ্চলে সীমান্ত সুরক্ষা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে,” নাম উল্লেখ না করার শর্তে বলছিলেন এক বিএসএফ কর্মকর্তা।

নদীপথে জঙ্গিরা ভারতে প্রবেশ করতে পারে, এমন আশঙ্কা করলেও ওই কর্মকর্তা কিন্তু এক প্রশ্নের জবাবে জানালেন যে এখনই যে এধরনের কোনও গোষ্ঠী সুন্দরবন দিয়ে ভারতে প্রবেশ করবে, এরকম কোনও গোয়েন্দা তথ্য তাদের হাতে নেই।

তার কথায়, ভবিষ্যতের কথা ভেবেই এই পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বিএসএফের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি সমীর কুমার মিত্র বলছিলেন, “সুন্দরবন অঞ্চলে যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে, সেখানে জলপথ আর গভীর জঙ্গলের কারণে বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনীর প্রয়োজন ছিলই।”

“ভাসমান সীমান্ত চৌকি বা স্পিড বোট অথবা পেট্রল ভেসেল দিয়ে পাহারা দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু সীমান্ত নিরাপত্তা আরও নিশ্ছিদ্র করতে এরকম একটা বিশেষ বাহিনী খুবই কাজে আসবে।”

“এই অঞ্চল দিয়ে চোরাচালান আর অনুপ্রবেশ যেমন হয়, তেমনই এখানকারই ইছামতী নদী দিয়েই সীমান্ত পেরনোর সময়ে জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের ধরা পড়ার ঘটনাও তো আছে। আবারও যে সে রকম প্রচেষ্টা হবে না, তার তো গ্যারান্টি নেই”, বলছিলেন মি. মিত্র।

কী থাকবে নৌ-ব্যাটালিয়নে?
বর্তমানে বিএসএফের নয়টি ভাসমান সীমান্ত চৌকি রয়েছে। এগুলি মাঝারি মাপের জাহাজ। প্রহরীরা ওই জাহাজে চেপেই নদীপথে ভ্রমণ করেন।

সীমান্ত চৌকিগুলির সঙ্গেই থাকে গড়ে চারটি করে স্পিড বোট। এর বাইরেও স্পিড বোট ও পেট্রল-ভেসেল রয়েছে বিএসএফের।

উত্তর ২৪ পরগণার হাসনাবাদে বিএসএফের দক্ষিণ বঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের ‘ওয়াটার উইং’-ও আছে।

“নতুন ব্যাটালিয়ন তৈরি হলে ‘ওয়াটার উইং’টি যেমন তার সঙ্গে মিশে যাবে, তেমনই ভাসমান সীমান্ত চৌকি হিসাবে ব্যবহৃত জাহাজগুলিও নতুন ব্যাটালিয়নের অধীনের চলে আসবে,” জানাচ্ছিলেন বিএসএফের এক কর্মকর্তা।

এছাড়াও ৪০টি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন এবং ১২-১৪টি অল-টেরেইন ভেহিকলও যুক্ত হবে নতুন ব্যাটালিয়নে।

উভচর যান থাকবে নতুন ব্যাটালিয়নে
‘অল-টেরেইন ভেহিকল’ এমন এক যান, যা জল আর স্থল দুই জায়গাতেই চলে। এখন গুজরাতের কচ্ছ সীমান্ত অঞ্চলে এই উভচর যান ব্যবহার করে বিএসএফ।

ওই কর্মকর্তার কথায়, “সুন্দরবন অঞ্চলে সাধারণ ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, ওখানকার তীব্র হাওয়ার মোকাবিলা করতে পারবে, এরকম ড্রোন আমরা ব্যবহার করব।“

নৌ-ব্যাটালিয়নের অর্ধেকের বেশি সংখ্যক সদস্যই কারিগরি বিদ্যায় প্রশিক্ষিত হবেন, যাতে তারা নৌ-যান চালানো, মেরামত করার মতো কাজ করতে পারেন। সঙ্গে সাধারণ বিএসএফ প্রহরীরাও থাকবেন।

“নতুন নিয়োগ যেমন দেওয়া হবে নৌ ব্যাটালিয়নের জন্য, তেমনই বর্তমান প্রহরীদের মধ্যেও যারা কারিগরি বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাদের অনেককেও নতুন ব্যাটালিয়নে নিয়ে নেওয়া হবে,” বলছিলেন বিএসএফ কর্মকর্তা।

বিএসএফের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি সমীর কুমার মিত্র অবশ্য বলছিলেন, “সুন্দরবন সীমান্তে নদীপথে পাহার দেওয়া একেবারেই বিশেষ ধরণের দায়িত্ব। এই অঞ্চলের সঙ্গে আমাদের অন্যান্য সীমান্ত অঞ্চল একেবারেই আলাদা।

“তাই নতুন নৌ ব্যাটালিয়নে যারা কাজ করবেন, তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এই ব্যাটালিয়নটি যে অঞ্চলে, যে কাজের জন্য তৈরি করা হচ্ছে, তাদের যেন সেই কাজেই ব্যবহার করা হয়, অন্য কোনও সীমান্তে বদলি না করে দিয়ে, এই ব্যাপারটাও মাথায় রাখা দরকার,” বলছিলেন মি. মিত্র।