মণিপুরে সহিংসতায় দুই নিরাপত্তারক্ষীসহ সাতজন নিহত - Southeast Asia Journal

মণিপুরে সহিংসতায় দুই নিরাপত্তারক্ষীসহ সাতজন নিহত

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ভারতের মণিপুর রাজ্যে গত ৪৮ ঘণ্টায় সহিংসতায় দুই নিরাপত্তারক্ষীসহ অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ও আগের দিন বুধবার—দুই দিনে সহিংসতায় তাঁরা নিহত হন।

গত বুধবার নিহত দুই নিরাপত্তারক্ষীর একজন ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটালিয়নের সদস্য ওয়াংখেম সমরজিৎ ও অন্যজন টি শৈলেশ্বর। আরেকটি ঘটনায় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়ক গ্রামরক্ষী বাহিনীর এক সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গতকাল মারা গেছেন চার বেসামরিক নাগরিক। প্রত্যেকেই মেইতেই সম্প্রদায়ের।

এ ঘটনার জেরে গতকাল ও আজ শুক্রবার ইম্ফল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিক্ষোভ করেছেন মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ। গতকাল ‘ইয়ুথ অব মনিপুর’ নামে মেইতেই সম্প্রদায়ের একটি যুব সংগঠনের কর্মীরা রাজ্য সচিবালয় ঘিরে বিক্ষোভ দেখান।

বিক্ষোভকারীরা কুলদীপ সিংয়ের অপসারণ দাবি করেন। রাজ্য সরকারের উপদেষ্টা ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা কুলদীপ সিংয়ের পরিবর্তে বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইউনিফায়েড কমান্ডকে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। কয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পুলিশকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়।

হেলিকপ্টার পেল মণিপুর সরকার
ভারতের মণিপুর রাজ্যে একটি হেলিকপ্টার গতকাল চার-পাঁচবারের বেশি আকাশে চক্কর দিয়েছে। রাজ্যের সশস্ত্র গোষ্ঠীর ওপর নজরদারি বাড়াতে আকাশে ওড়ে হেলিকপ্টারটি। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাছ থেকে এই হেলিকপ্টার নেওয়া হয়েছে।

ভারতের মণিপুর রাজ্যে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের (ইউনিফায়েড কমান্ড) দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা কুলদীপ সিং গতকাল সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক বৈঠকে এসব তথ্য জানান।

এর আগে বুধবার মণিপুরের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের কমিশনার টি রঞ্জিত সিং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ‘বিমান সাহায্য’ চেয়ে চিঠি লেখেন। এতে তিনি লেখেন, জরুরিকালে নিরাপত্তার স্বার্থে অন্তত সাত দিনের জন্য বিমান সাহায্য দরকার। আপাতত নিরাপত্তাকর্মী ও অস্ত্রশস্ত্র দক্ষিণ–পূর্ব মণিপুরের মোরেতে নেওয়ার জন্য এই হেলিকপ্টারের দরকার।

মিয়ানমার থেকে আরও সেনার প্রবেশ
গতকাল সাংবাদিক বৈঠকে সেনাবাহিনী ও যৌথ বাহিনীর ওপর হামলার জন্য কুলদীপ সিং কুকি জঙ্গিদেরই অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, কুকি জঙ্গিদের ‘একটা অংশ মিয়ানমারের দিক থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকছে’, যা সমস্যাকে আরও তীব্র করে তুলছে।

মণিপুরে এক বছর ধরে সংঘাত চলছে। রাজ্য সরকার বলে আসছে, জঙ্গিরা মিয়ানমার থেকে এসে মণিপুরে বসবাস করছে। অনেক ক্ষেত্রে হামলা চালানোর জন্য তারাই দায়ী। বর্তমানে তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও গত প্রায় এক বছরে মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত বন্ধ করতে পারেনি ভারত।

এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীসহ মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডের সামাজিক সংগঠন এই সীমান্ত বন্ধের বিরোধিতা করে আসছে। গত সপ্তাহে মিজোরামের সবচেয়ে বড় সামাজিক সংগঠন ও নাগাল্যান্ডের একটি যুব সংগঠন বিবৃতি দিয়ে বলেছে, মিয়ানমার ও ভারতের সীমান্ত বন্ধ করা যাবে না। এর আগে জানুয়ারির গোড়ার দিকে মিজোরামের নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী সীমান্ত বন্ধের বিরোধিতা করেন।

এতে বিপদে পড়ছে ভারত সরকার। কারণ, একদিকে কুকি জঙ্গিরা ভারতে ঢুকছে বলে মণিপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করছে। অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে মিয়ানমার থেকে সেখানকার সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভারতে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন। গত দুই দিনে রাখাইন প্রদেশ থেকে মিয়ানমারের অন্তত ২৭৮ সেনাসদস্য ভারতে ঢুকেছেন। তাঁরা বাংলাদেশ, মিজোরাম ও মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে প্রবেশ করেছেন।

গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৬৭৬ সদস্যকে ভারত সে দেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।