বিমান হামলায় মিয়ানমারে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নিহত
নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে হওয়া গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে আবারো কেঁপেছে কক্সবাজারে টেকনাফ উপজেলার সীমান্ত এলাকা। রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া ও সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ এলাকা থেকে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
এদিকে মিয়ানমারে মিন পায়া নামের একটি মুসলিম গ্রামে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় প্রায় ৫০ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ বিমান হমলার ঘটনা ঘটে।
মিয়ানমারের সংঘাতের বিষয়ে নজর রাখা দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বিমান হামলায় অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল নামার আশঙ্কা করেছে ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা। মো. সেলিম নামের এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপরে প্রতিনিয়ত হামলা হচ্ছে। এতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছেন। এভাবে হামলা অব্যাহত থাকলে মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা তার।
বিস্ফোরণের শব্দে আবারো কাঁপছে সীমান্ত
জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হ্নীলার চৌধুরীপাড়া ও সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গোলাগুলির পাশাপাশি অন্তত ২০ থেকে ৩০টি মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
তারা বলছেন, রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের উত্তরে নাকপুরা এলাকা এবং পূর্বে ধনখালী, হাসুরাতা, নাইক্ষ্যংদিয়া, গর্জনদিয়া ও সংক্ষদাবিল এলাকায় চলমান সংঘাতই এসব বিস্ফোরণের কারণ। তবে সোমবার বেলা ১১টার পর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ কমে গেলেও মাঝে মাঝে গুলির শব্দ ভেসে আসছে।
হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, দেড় মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের রাখাইনে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি সংঘাত চলছে। উভয়পক্ষে গোলাগুলি, মর্টারশেল, গ্রেনেড বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। যার প্রভাব এসে পড়ছে এপারে।
রোববার রাতে হঠাৎ একসঙ্গে প্রায় ২০টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণে সীমান্তের এপারের লোকজন একটু আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, রাতের বেলায় বিকট শব্দে মর্টারশেলের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, কুলালপাড়া, ডেইলপাড়া, হাঙ্গারডেইলসহ অন্তত ১৩টি গ্রাম। এতে লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটের টোল আদায়কারী মোহাম্মদ ছিদ্দিক জানান, সোমবার ভোররাতে সেহরির সময় নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে বেশ কিছু গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সকালেও বিস্ফোরণের শব্দ আসে ওপার থেকে। এখনো মাঝে মাঝে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে নাফ নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা আতঙ্কে রয়েছেন।
বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ওপারে সংঘাতের কারণে মাঝে মাঝে এপারে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। তবে রাখাইনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছে বিজিবি। বিশেষ করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।