অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প, সক্রিয় ২০০ সন্ত্রাসী গ্রুপ - Southeast Asia Journal

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প, সক্রিয় ২০০ সন্ত্রাসী গ্রুপ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প, সক্রিয় ২০০ সন্ত্রাসী গ্রুপ
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সন্ত্রাসী, মাদক ও অস্ত্র কারবারিদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। সেখানে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) বিরোধ বাধে প্রায়ই। প্রতিটি ক্যাম্পের আনাচে-কানাচে তাদের বিচরণ। অপহরণ থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নেই যে তারা করছে না। মুক্তিপণ না পেলে তারা হত্যাকাণ্ডও ঘটায়। প্রায় প্রতিদিন সংগঠনগুলোর মধ্যে ঘটছে সংঘর্ষ।

জানা গেছে, গত ছয় বছর ৭ মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪২১টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। অপরহরণের ঘটনা ঘটেছে প্রায় অর্ধশতাধিক। অন্যান্য অপরাধ তো আছেই। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও আইসের চালান এনে ক্যাম্পে বিক্রি করা হয় দেদারছে। টাকার বদলে ডলারে বিক্রি হয় ইয়াবার চালান। রোহিঙ্গাদের অপরাধ ঠেকাতে ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি। তারপরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

ক্যাম্পের ভেতরে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা চিন্তিত। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরে একাধিক বৈঠক হয়েছে। কয়েকটি এনজিওর বিষয়েও নজরদারি করছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখন মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীদের আখড়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায় প্রতিদিন উখিয়া-টেকনাফ, তুম্ব্রু-নাইক্ষ্যংছড়ি ও বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত প্রতিটি ক্যাম্পে ঢোকে ইয়াবা ও আইসের চালান। পরে ক্যাম্প থেকে ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসেই সারাদেশের মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে অপরাধী রোহিঙ্গারা। এমনকি কিছু রোহিঙ্গা নেতা ঢাকা বা চট্টগ্রামে বসে মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করে। গড়ে উঠেছে ক্যাম্পকেন্দ্রিক অসংখ্য সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ।

ক্যাম্পে নিজেদের আধিপত্য জিইয়ে রাখতে ও প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়া রুখতে ইয়াবা ও আইস বিক্রির টাকায় তারা ভারী অস্ত্র কিনছে। সন্ধ্যা হলেই স্থানীয় বাসিন্দারা সন্ত্রাসীদের ভয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস করে না। প্রায় প্রতিদিন খুন, অপহরণ, ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনই ক্যাম্পগুলোতে বসে মাদকের হাট। সরকারি-বেসরকারি দাতা সংস্থার সদস্যরা ক্যাম্প ছাড়লেই রোহিঙ্গা মাদক কারবারিরা সক্রিয় হয়। দিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকলেও রাতে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। রাত গভীর হতে থাকলে ক্যাম্পগুলোতে অচেনা মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। ক্যাম্পে মজুদ রাখা ইয়াবা রাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। ইয়াবা ও আইস বদলে দিয়েছে রোহিঙ্গাদের জীবন।

ক্যাম্পে অধিক পরিচিত সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে রয়েছে- মাস্টার মুন্না গ্রুপ, নবী হোসেন গ্রুপ, মৌলভি ইউসুফ গ্রুপ, রকি বাহিনী, শুক্কুর বাহিনী, আব্দুল হাকিম বাহিনী, সাদ্দাম গ্রুপ, জাকির বাহিনী, পুতিয়া গ্রুপ, সালমান গ্রুপ, গিয়াস বাহিনী, মৌলভি আনাস গ্রুপ, কেফায়েত গ্রুপ, জাবু গ্রুপ, আবু শামা গ্রুপ, লেড়াইয়া গ্রুপ, খালেদ গ্রুপ, শাহ আজম গ্রুপ, ইব্রাহিম গ্রুপ, ছালামত গ্রুপ কামালগ্রুপ ও খলিল গ্রুপসহ অন্তত ২০০ গ্রুপ সক্রিয়। এসব গ্রুপকে আরসা, আল সাবা ও আল ইয়াকিন নিয়ন্ত্রণ করে।

নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, বিভিন্ন বড় এনজিওগুলো অর্থও দিতে হচ্ছে আরসাকে। না দিলে হুমকি দেওয়া হয়। আরসার সদস্যরা উখিয়া-টেকনাফের প্রতিটি ক্যাম্পে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে। এসব ক্যাম্পে দুই শতাধিক মাদরাসা ও হেফজখানা রয়েছে। প্রতিটি মাদরাসা থেকে মাসে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। টাকা হাসিমুখে না দিলে খেসারত গুনতে হয়। চাঁদা না পেয়ে খুনের ঘটনাও ঘটাচ্ছে আরসা। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ, বালুখালী ক্যাম্পের মাস্টার আরিফ উল্লাহ, হাফেজ শফিকুল ইসলাম, মুফতি আবদুল্লাহকে তারা হত্যা করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সক্রিয় আরসার সদস্যরা।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আরসার প্রধান হচ্ছেন আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী। তার সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সুসম্পর্ক আছে। সন্ধ্যার পর তাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। আরসাকে নির্মূল করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি।’

হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল হুদা বলেন, ‘অপহরণ আতঙ্কে অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পাঠানো নিরাপদ মনে করছেন না। দমদমিয়া, জাদিমোরা, লেদা, আলীখালী, রঙ্গীখালী, পানখালী, কম্মুনিয়াপাড়া ও মরিচ্যঘোনা এলাকার মানুষ বেশি আতঙ্কিত।’

কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপ আছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সচেষ্ট। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। খুন, মাদক চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত অনেক রোহিঙ্গা।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।