নাথান বমের স্ত্রী লাল সমকিম বম কোথায়?

নাথান বমের স্ত্রী লাল সমকিম বম কোথায়?

নাথান বমের স্ত্রীসহ দুই সিনিয়র নার্সকে স্ট্যান্ড রিলিজ
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য অঞ্চলের আলোচিত বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এর প্রধান নাথান লনচেও বম ওরফে নাথান বম। কুকি-চিন নিশ্চিহ্ন ও নাথান বমকে গ্রেপ্তারে পাহাড়ে চলছে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। সর্বশেষ সোমবার পাওয়া তথ্য অনুযায়ী যৌথবাহিনীর অভিযানে কুকি-চিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মোট ৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যেই আলোচনায় আসে নাথান বমের স্ত্রী লাল সমকিম বমের নাম।

লাল সমকিম বম রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স হিসেবে কর্মরত থাকার তথ্য ছড়িয়ে পরলে গত ৮ এপ্রিল তাকে লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে বদলি আদেশের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নার্স লাল সমকিম বম সেখানে যোগদান করেননি বলে তথ্য এসেছে গণমাধ্যমের কাছে। এদিকে তার সন্ধান মিলছে না নিজ বাড়িতেও। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনের কাছেও কোনো তথ্য নেই তার বিষয়ে।

হঠাৎ করেই কুকি-চিন প্রধান নাথান বমের স্ত্রী নার্স লাল সমকিম বমের কোনো সন্ধান মিলছে না। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল তিনি রুমা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওইদিন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উপ সচিব (পরিচালক প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, নার্সিং সেবা ১ শাখার এক স্মারকের আলোকে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লাল সমকিমকে লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বদলি করা হয়। কিন্তু বদলি আদেশের পর লাল সমকিম বম বদলিকৃত কর্মস্থলে উপস্থিত হননি বলে তথ্য রয়েছে।

বদলির পরিপত্রে ৯ এপ্রিলের মধ্যে কর্মস্থলে আবশ্যিকভাবে যোগদানের কথা বলা হয়। অন্যথায় ৯ এপ্রিল তারিখের অপরাহ্নে স্ট্যান্ড রিলিজ বলে গণ্য করা হবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তবে খোজ নিয়ে জানা যায়, বদলির নির্দেশনার পর সর্বশেষ মঙ্গলবার পর্যন্ত লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নার্স লাল সমকিম বম যোগদান করেননি।

লালমনিরহাটের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রমজান আলী বলেন, ‘নার্স লাল সমকিম বম এখনো এই হাসপাতালে যোগদান করেননি। তবে তার যোগদান করার কথা ছিল জেনেছি।’ কবে যোগদান করতে পারে সেই বিষয়ে তার কাছে আর কোনো তথ্য নেই বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলি হওয়ার পর থেকে তিনি সেখানেও আর জাননি। কারো সাথে কোনো যোগাযোগও করেননি।

রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বামংপ্রু মার্মা বলেন, ‘নার্স লাল সমকিম বমকে বদলির নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে তিনি আর এখানে আসেননি। তিনি কোথায় আছেন সেই তথ্যও আমাদের কাছে নেই।’

রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক দায়িত্বশীল অফিসার বলেন, ‘নার্স লাল সমকিম বমের বদলি কার্যকর হওয়ার পর থেকে তার আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। বদলির কাগজ নিয়ে তার বাড়িতে গিয়েও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তারা তাকে পায়নি। এমনকি তাকে মোবাইলেও পাওয়া যায়নি।’

কর্মস্থলের বদলির আদেশের পর থেকেই নিরুদ্দেশ হয়ে আছেন নার্স লাল সমকিম বম। কোথাও তার সন্ধান মিলছে না। এমনকি রুমা সদরের ২নং ওয়ার্ডে তার নিজ বাসাতেও তিনি থাকছেন না। তাহলে বদলির আদেশের পর কোথায় রয়েছে কুকি-চিন প্রধান নাথান বমের স্ত্রী লাল সমকিম বম। এমন প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয়দের মাঝেও।

রুমা উপজেলার সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মার্মার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন যাবত তাকে (নার্স লাল সমকিম বম) দেখা যাচ্ছে না। তিনি বাড়িতে থাকেন না। বাড়ির আসে পাশে সব সময়ই প্রশাসনের লোকজন রয়েছেন। তবে লাল সমকিম বমকে আমরা অনেকদিন যাবত দেখছি না।’

রুমা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য (সংরক্ষিত) কল্যানি চৌধুরী বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই নাথানের স্ত্রী লাল সমকিম বমকে নিজ বাড়িতে দেখা যাচ্ছে না। তিনি কোথায় আছেন সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

লাল সমকিম বমের বাড়িতে নাথান বমের যাতায়াত ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রায় দুই বছরেও নাথান বম এই বাড়িতে আসার কোনো খবর আমরা পাইনি।’

স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা প্রশাসনের কাছেও লাল সমকিম বমের কোনো তথ্য মিলছে না। বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের প্রধান নাথান বমের পরিবারের ওপর প্রশাসনের নজরদারি নিয়েও এখন বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে।

এ বিষয়ে রুমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, ‘আমি এই উপজেলায় নতুন এসেছি। তবে খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি তিনি (লাল সমকিম বম) এলাকাতে নেই। তাকে যদি প্রশাসন গ্রেপ্তারও করত তাহলেও সবাই বিষয়টা জানত। তবে তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’

রুমা থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. শাহজাহান বলেন, ‘নাথান বমের স্ত্রীর কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তিনি এলাকায় আছেন কি নেই তাও আমাদের জানা নেই।’

লাল সমকিম বমের বিষয়ে পুলিশি নজরদারি ছিল কি না এবং তার নামে কোনো মামলা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত থানায় তার নামে কোনো মামলা নেই। নজরদারি বা তার বিষয়ে কোনো তথ্যই আপাতত থানা পুলিশের কাছে নেই।’

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘কুকি-চিন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলেই নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তবে নাথান বমের স্ত্রীর বিষয়ে আপাতত কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তাকে রুমা থেকে বদলি করা হয়েছে সেই বিষয়টি আমরা জানি। এর বাইরে আর কোনো তথ্য নেই।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেএনএফ প্রধান নাথান বমের বাড়ি রুমা বাজার সংলগ্ন ইডেনপাড়ায়। এই এলাকাতেই কাঁচা-পাকা একটি টিন শেডের সাদাসিধা ঘরে নাথান বমের স্ত্রী লাল সমকিম বম থাকতেন। নাথান বমের ছোট ছেলে স্কেন্ডি বম (৫) ও বড় ছেলে স্কলার বম (১৫)। স্কলার বর্তমানে ভারতের মিজোরামে তার মামার বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করছে। স্কেন্ডি স্থানীয় একটি স্কুলে প্রাক-প্রাথমিকে পড়ত।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।