সন্তু লারমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে ইউপিডিএফের চিঠি

সন্তু লারমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে ইউপিডিএফের চিঠি

সন্তু লারমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে ইউপিডিএফের চিঠি
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক শর্ত’ হিসেবে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে ২০২৪) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা এক চিঠিতে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুতন কুমার চাকমা এই দাবি জানিয়েছেন।

চিঠিতে তিনি বলেন, সরকার ১৯৯৮ সালে প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন (১২ নং আইন) বলে ১৯৯৯ সালের ২৭ মে অন্তর্বর্তীকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করে। জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমাকে এই পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই পর থেকে আজ অবধি অর্থাৎ গত ২৫ বছর ধরে নির্বাচন ছাড়া তিনি এক নাগাড়ে আঞ্চলিক পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন।’

এই সুদীর্ঘ সময়ে সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রতি তার দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন অভিযোগ করে ইউপিডিএফ নেতা বলেন, সন্তু লারমা ‘আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা সত্বেও ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য একটি সশস্ত্র গ্রুপ (প্রাইভেট আর্মি) প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছেন, যা তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে অকপটে স্বীকার করেছেন।’

বাংলাদেশে একজন প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার কাউকে তার ব্যক্তিগত সশস্ত্র বাহিনী রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে কোন পূর্ব নজীর নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সন্তু লারমা এই সশস্ত্র গ্রুপকে দিয়ে তার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের খুন, জখম ও অপহরণ করে চলেছেন বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘গত ২৫ বছরে তার নেতৃত্বে পরিচালিত এই সশস্ত্র গ্রুপের হাতে ইউপিডিএফ, আওয়ামী লীগ ও সংস্কারবাদী জেএসএসের শত শত নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। তার মধ্যে ইউপিডিএফের খুন হন ২৭৭ জন। এছাড়া বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাসহ আওয়ামী লীগের খুন হন ১০ জন।

তিনি বলেন, সন্তু লারমার নির্দেশেই যে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তাতে সন্দেহ থাকার কোন অবকাশ নেই। কারণ ২০০০ সালের ১৩ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে তার দলের নেতাকর্মীদের তিনি এই হত্যার নির্দেশ দেন। এই পত্রিকার সাংবাদিক বর্তমানে প্রয়াত সাগর সারওয়ার সন্তু লারমাকে প্রশ্ন করেন তিনি ইউপিডিএফকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবেন কী না।

তার জবাবে সন্তু লারমা স্পষ্ট ভাষায় বলেন: “এদের (ইউপিডিএফ সদস্যদের) গলা টিপে হত্যা করতে হবে। যাতে কিছু করতে না পারে। হাত ভেঙে দিতে হবে, যাতে লিখতে না পারে। ঠ্যাং ভেঙে দিতে হবে, যাতে হাঁটতে না পারে। চোখ অন্ধ করে দিতে হবে, যাতে দেখতে না পারে। যারা চুক্তির পক্ষে, জনগণের অধিকারের পক্ষে তারাই এ কাজ করবে।”

যিনি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবিলার জন্য দেশের আইন লঙ্ঘন করে ব্যক্তিগতভাবে সশস্ত্র গ্রুপ প্রতিপালন করেন এবং তাকে ব্যবহার করে খুন-সন্ত্রাস চালান, তার আঞ্চলিক পরিষদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সংস্থার নেতৃত্ব দেয়ার কোন নৈতিক ভিত্তি থাকতে পারে না বলে নুতন কুমার চাকমা মন্তব্য করেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের ৪১ নং ধারা মোতাবেক সন্তু লারমার বিরুদ্ধে আইনী ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

চিঠিতে তিনি বলেন, ‘ইউপিডিএফ তথা সমগ্র পার্বত্যবাসীর দাবি হলো গত ২৫ বছর ধরে আঞ্চলিক পরিষদের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতা, পরিষদ আইনে প্রদত্ত ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করে ব্যক্তিগত সশস্ত্র গ্রুপ প্রতিপালন ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা এবং চরম জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার দায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের ৪১ নং ধারা মোতাবেক সন্তু লারমা ও তার নেতৃত্বাধীন পরিষদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।’

উক্ত পদক্ষেপ হবে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক শর্ত।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে ইউপিডিএফের সহসভাপতি নুতন কুমার চাকমার পক্ষে একটি প্রতিনিধি দল পানছড়ি ইউএনওর কাছে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা তার উক্ত চিঠি হস্তান্তর করেন।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।