পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত পিসিপির নতুন ষড়যন্ত্র
নিউজ ডেস্ক
পার্বত্য চট্টগ্রামে গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের ইন্ধনে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার পর নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অন্তর্বতীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলা লক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে সাত দফা দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) আজ রবিবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এসব দাবি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কুনেন্টু চাকমা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন, নির্যাতন, হত্যার মতো ঘটনার শিকার হয়ে অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। দীর্ঘ সংগ্রামের পথে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় বহু নেতাকর্মীকে কারাবন্দি হতে হয়েছে।’
সংগঠনের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিনি সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি কারাগারে আটক ইউপিডিএফ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মুক্তিসহ ইউপিডিএফ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গত ৩০ অক্টোবর খাগড়াছড়ির পানছড়িতে তিন জন ইউপিডিএফ কর্মী হত্যার বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামে জারি করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ১১ দফা নির্দেশনা বাতিল, গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে চার জন নিহতের ঘটনায় সঙ্গে জড়িতদের বিচার সহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের যথাযথা ক্ষতিপূরণ, খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সোহেল রানা গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহনের দাবিও রয়েছে।
পাহাড়ের ঘটনায় নজর রাখেন এমন কয়েকজন বিশ্লেষক বলছেন, সম্প্রতি পাহাড়জুড়ে নানা অঘটনের জন্ম দেয়া ইউপিডিএফ নতুন করে কোন ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করছে। এরই অংশ হিসেবে নানা সময়ে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজির মতো গুরুতর মামলায় আটক থাকা সন্ত্রাসীদের মুক্ত করতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে সংগঠনটি। এছাড়া, গত ৩০ অক্টোবর খাগড়াছড়ির পানছড়িতে চাঁদাবাজির টাকা ভাভাগিকে কেন্দ্র নিজ দলের কর্মীদের মধ্যকার গোলাগুলিকে হত্যাকান্ড অভিহিত করে নিজেদেরই দুর্বলতা ঢাকার অপচেষ্টাও করছে তারা।
গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় সহিংসতায় সররাসরি ইন্ধন দিয়ে ওই ঘটনাকে নিয়ে জলঘোলা করে ইউপিডিএফ। এরপর বহিরাগত যুবকদের দিয়ে বাঙ্গালী ও নিরাপত্তাবাহিনীর উপর হামলা চালিয়ে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করে তোলে সন্ত্রাসীরা। এসময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি আটকে দিয়ে বহিরাগত পাহাড়ি যুবকরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বাকবিন্ডতায় জড়ালে সুযোগ বুঝে এলোপাতাড়ি গুলি করে তিন উপজাতি যুবককে হত্যা করে ইউপিডিএফ। এ ঘটনাকে রং মাখিয়ে দেশ-বিদেশে অপপ্রচার করে সেসময় নিজেদের পক্ষে সহানুভুতিও আদায়ের চেষ্টা করে ইউপিডিএফ।
এছাড়া, খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সোহেল রানাকে পরিকল্পিত ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলে পিসিপির নেতা-কর্মীরা। সেসময় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, পিসিপির নেতা-কর্মীরা শিক্ষক সোহেল রানাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর ইউপিডিএফ ও পিসিপি নানা ভাবে মামলা প্রত্যাহারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে এবার সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অপরাধ স্বীকার না করে উল্টো সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের নজরে আসতে নতুন করে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয় বলে দাবি বিশ্লেষকদের।
উল্লেখ্য,, পাহাড়ে অজস্ত্র হত্যা, অপহরণ ও ধর্ষনের মতো ঘটনায় মামলা রয়েছে পিসিপির নেতা কুনেন্টু চাকমার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কুনেন্টু চাকমা জামিনে বের হয়ে সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নানা ধরনের মিথ্যাচার করছেন। ২০১৯ সালের ২রা ফ্রেবুয়ারি শনিবার রাঙ্গামাটির কুতুকছড়ির উত্তর পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তল, গুলি ও চাঁদাবাজির ৪ লাখ টাকাসহ কুনেন্টু চাকমাকে আটক করতে সক্ষম হয় নিরাপত্তাবাহিনী। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি কুনেন্টু চাকমা সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হন।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
