চুক্তি ছাড়াই ফেনী নদী থেকে পানি তুলে নিচ্ছে ভারত

চুক্তি ছাড়াই ফেনী নদী থেকে পানি তুলে নিচ্ছে ভারত

চুক্তি ছাড়াই ফেনী নদী থেকে পানি তুলে নিচ্ছে ভারত
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ফেনী নদীর উৎপত্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হলেও এই নদীর উপর একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে ভারত। কোন ধরনের চুক্তি ছাড়াই গত প্রায় এক যুগ ধরে ৩৭টি স্থানে পাম্প বসিয়ে ফেনী নদী থেকে অবিরাম পানি তুলে নিচ্ছে।

পতিত স্বৈরাচারি আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় ভারত ফেনী নদী থেকে আরো ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি উত্তোলন করতে পারবে। পক্ষান্তরে নিজ দেশের নদীর পানি ব্যবহার করতে গেলে বাংলাদেশের কৃষকদের অস্ত্র উচিয়ে হুমকি দিচ্ছে বিএসএফ।

ভারতের এক তরফা আগ্রাসনে পানি শুকিয়ে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে ফেনী নদীতে। যে দিকে চোখ যায় শুধুই বালুচর। বলতে গেলে খরস্রোতা ফেনী নদী এখন মৃতপ্রায়। এ অবস্থায় ভারতে ইনটেক ওয়েল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মুহুরি সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়ার আংশকা দেখা দিয়েছে। আর এ সমঝোতা স্মারকের প্রতিবাদ করায় বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ ছাত্রলীগের একদল সন্ত্রাসীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন।

ফেনী নদীর উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ি জেলার ভগবান টিলা এলাকায়। চট্টগ্রামে মিরসরাইয়ের আমলীঘাট পর্যন্ত প্রায় ৮৫ কিলোমিটার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রেখা হিসেবে চিহ্নিত। এক সময় এই ফেনী নদী ছিল খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়, গুইমারা ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার অধিবাসীদের পরিবহন ও যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। ফেনী নদীর বুক চিরে এক সময় বড় বড় সওদাগর নৌকা চলত, অথচ সে নদীতে এখন গোসল করারও পানি নেই। পানির অভাবে নাব্যতা হারিয়ে এক কালের স্রোতস্বিনী ফেনী নদী রূপ নিয়েছে বালুচরে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে,ভারতের ভিতর থেকে যে সব ছড়া-নালা দিয়ে পানি এক সময় ফেনী নদীতে এসে পড়তো সেখানে বাধ দিয়ে পানি আটকে রাখা হয়েছে। আর ফেনী নদীর তীরের ২০ থেকে ৫০ গজের মধ্যে অবৈধভাবে পাকা হাউজ নির্মাণ করে মাটির নীচ দিয়ে নদীতে পাইপ ফেলে পানি তুলে নিয়ে যাচ্ছে ভারত। ফেনী নদীতে ভারতীয় পক্ষের এ ধরনের পানির পাম্প রয়েছে ৩৭টি স্থানে। যা দূর থেকে বোঝার কোন সুযোগ নেই। এই সব পাম্প দিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭৫ কিউসেক উত্তোলন করছে ভারত। আর এ পানি দিয়ে ফেনী নদীর তীরে সবজিসহ নানা প্রজাতির ফসলের চাষ করছে ভারতের কৃষকেরা। কিন্ত বাংলাদেশের কৃষকরা ফেনী নদীর পানি তুলতে গেলে যত বিপত্তি। বন্দুক উচিয়ে তেড়ে আসে বিএসএফ। কখনও কখনও নদীতে গোসল করতে গেলেও বাধা দেওয়া হয় এমন অভিযোগ ফেনী নদীর তীরবাসী ও কৃষকদের।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর নয়া দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে শীর্ষ বৈঠকে বসেন বাংলাদেশের সাবেক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই সরকার প্রধানের বৈঠক শেষে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হয়। এ সমঝোতা স্মারকের আওতায় ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি উত্তোলন করতে পারবে ভারত। ওই পানি ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে।

সূত্রটি বলছে, ফেনী নদীর পানি চুক্তির আলোকে ২০১০ সালে যৌথ নদী কমিশনের ৩৭তম বৈঠকে সাবরুম শহরের মানুষের খাবার পানি সরবরাহের জন্য ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে কারিগরি কমিটির বৈঠকে ৭টি শর্তসাপেক্ষে খাবার পানি সরবরাহের জন্য ‘লো লিফট’ পাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের আগস্টে ঢাকায় সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ এ প্রতিশ্রুতি রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ৫ই অক্টোবর ভারতে দুই দেশের রাষ্ট্র প্রধানের শীর্ষ বৈঠকে এ সমঝোতা স্মারক সই হয়।

এ বৈষম্যমূলক সমঝোতা স্মারকের প্রতিবাদ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়ার অপরাধে ২০১৯ সালের ৬ই অক্টোবর রাতে বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ ছাত্রলীগের একদল সন্ত্রাসীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

রামগড়ের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ আহমেদ ভূঁইয়ার অভিযোগ, বিনা বাধায় ভারত এক তরফা ভাবে ফেনী নদী থেকে পানি তোলে নেওয়ার পাশাপাশি নদী তীরবর্তী তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হচ্ছে।সাবরুম পানি সরবরাহের প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ফেনী নদীর অস্থিত্ব হারিয়ে যাবে। হুমকির মুখে পড়বে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মুহুরি সেচ প্রকল্প।

রামগড়ের সাংবাদিক নিজাম উদ্দীন লাভলু বলেন, ১৯৭৪ সালে সম্পাদিত ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিতে বলা আছে, সীমান্তের শূণ্য রেখা হতে উভয় পাশে ১৫০ গজের ভিতরে কেউ কোন স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করতে পারবে না। অথচ ভারত সে চুক্তি লঙ্ঘন করে ফেনী নদীর কূল ঘেঁষে মাত্র ২০ থেকে ৫০ গজের মধ্যে বেআইনীভাবে ৩৭টি পাকা পাম্প হাউজ তৈরি করে পানি তুলে নিচ্ছে। ফলে ফেনী নদী অস্থিত্ব হারাতে বসেছে। এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ফেনী নদী ইতিহাস হবে।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান এর সঙ্গে কথা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরবর্তীতে জানানো হবে বলে মন্তব্য প্রকাশ করেন।

সূত্র: বাংলাভিশন অনলাইন।