বাঘাইছড়ি হত্যাকান্ডের পর বান্দরবানে আওয়ামীলীগ নিশ্চিহ্ন করার টার্গেট সন্ত্রাসীদের
![]()
নিউজ ডেস্কঃ
কয়েকদিন পর পর শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ নেতাদেরই গুম অথবা গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে সম্প্রীতির বান্দরবানে। বাদ যাচ্ছেন না জেলা পর্যায়ের নেতা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাও। প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও হরতালেই সীমাবদ্ধ আওয়ামীলীগের কর্মসূচী।
চলতি বছরের ৭মাসেই অপহরণ ও খুন হয়েছেন অন্তত ৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী। টার্গেটে রয়েছেন বড় বড় নেতারা। অজানা এক আতঙ্ক যেন ভর করেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ পরিবারে। রাজনীতির বাহিরের আমজনতাও রয়েছেন আতঙ্কে। ঘর-বাড়ি ছেড়েছেন বহু লোক। এমনকি নিজের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বানিজ্যও ছেড়েছেন অনেকে। বান্দরবানের কিছু কিছু এলাকা যেন হয়ে উঠেছে কোন এক ভূতুড়ে নগরী।
গত ২২ জুলাই রোয়াংছড়িতে আওয়ামী লীগ নেতা মং মং থোয়াইকে গুলি করে হত্যার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের হিসেব মতে, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসেই খুন ও অপহরণের শিকার হন অন্তত ৬ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী।
২০১৬ সালের ১৪ জুন বান্দরবান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মংপ্রু র্মামাকে অপহরণ করা হয় রোয়াংছড়ি থেকে ।
এদিকে চলতি বছরের ১৯ মে আওয়ামী লীগ নেতা ক্যহ্লা চিং মার্মাকে গুলি করে হত্যা করা হয় বান্দরবান রাঙামাটি সীমান্তের বাঙ্গালহালিয়া এলাকায়। এরপর মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ২০ মে অপর আওয়ামীলীগ নেতা ক্যচিং থোয়াই মার্মাকে গুলি করে হত্যা করা হয় রাজবিলা ইউনিয়নের রাবার বাগান এলাকায়।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো, মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে ২৩ মে পৌর আওয়ামী লীগ নেতা চথোয়াই মং মার্মাকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করা হয় সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নে।
২৫ জুন অংসিংচিং মার্মা কে রোয়াংছড়ি উপজেলার থোয়াইংগ্য পাড়ায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
সবশেষ গত ২২ জুলাই সোমবার রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মং মং থোয়াই মার্মাকে রোয়াংছড়ি থেকে বান্দরবান সদরে ফেরা পথে শামুকঝিরি এলাকায় ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়।
একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী হত্যার ঘটনায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসকে দ্বায়ী করা হলেও অভিযোগ অস্বীকার করে এসব ঘটনার জন্য মগ লিবারেশন পার্টিকে দায়ী করছে জেএসএস।
তবে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)’র কিছু দলছুট সদস্যকে নিয়ে গঠিত মগ লিবারেশন পার্টির সদস্য ইতিমধ্যে পাহাড়ে জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ডে।
দল ক্ষমতায় থাকার পরেও কর্মী হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল কিংবা হরতাল অবরোধের মতো কমর্সূচিও পালন করে আওয়ামী লীগ। জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা কেএসমংসহ শতাধিক জেএসএস নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয় নিহতদের পরিবারের পক্ষ হতে। তাদের মধ্যে কেএসমং, ক্যবামংসহ বেশ কয়েকজন কারাগারে আছেন। অনেকে আবার রয়েছেন পলাতক।
এছাড়া আজো সন্ধান মিলেনি ২০১৬ সালে অপহরণ হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মং প্রু মারমার।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ.কে. এম. জাহাঙ্গীর বলেন- ‘পাহাড়ে কারা হত্যা চাঁদাবাজি করে প্রশাসন সব জানে’। তিনি জনসংহতি সমিতির দিকে ইংগিত করে সব অপকর্মের জবাব দেয়ারও হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘জেএসএস এর সন্ত্রাসীরা আমাদের ৬০ জন নেতার নাম দিয়ে হিটলিস্ট তৈরি করেছে। একে একে তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।’
পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, পাহাড়ের আধিপত্য বিস্তারে খুনোখুনির ঘটনা নতুন নয়। আমরাও বসে নেই। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), জেএসএস (এমএন লারমা), প্রসীত বিকাশ খীসার ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)’র মধ্যে বান্দরবানে সবচেয়ে সক্রিয় সন্তু লারমার জেএসএস।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি বছর উপজেলা পররিষদ নির্বাচনের সময় রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ভয়াবহ হত্যাকান্ডের পর প্রশাসনের নড়ে-চড়ে বসার ধরণ ও অভিযানের মুখে সুবিধা করতে না পেরে, এলাকাছাড়া হয়ে প্রসীত বিকাশ খীসার ইউপিডিএফ ও সন্তু লারমার জেএসএস সম্প্রীতির বান্দরবানে শুরু করেছে নতুন হত্যাযজ্ঞ। তবে তারা মনে করছেন, প্রশাসনের শক্ত অবস্থান ও স্থানীয়দের সচেতনতাই বান্দরবানে শান্তি ফেরাতে পারে।