সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে শান্তি বিনষ্ট হবে না, সেনা ক্যাম্পের স্থলে পুলিশ-বিজিবি ও র্যাব ক্যাম্প স্থাপন করা হবে- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
 
                 
নিউজ ডেস্ক
১৯৯৭ সালে তৎকালীন শান্তিবাহিনীর সাথে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তিকে সম্মানের সাথে অনুসরণ করেই পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ মন্তব্য করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেছেন, শান্তি চুক্তির ধারা অনুযায়ী পাহাড় হতে বেশ কিছু সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে এমনটা ভাবা যাবে না, যে সেখানে শান্তি-শৃঙ্খলা থাকবে না। পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পের স্থলে অথবা তার আশে পাশে পুলিশ ক্যাম্প, বিজিবি ক্যাম্প বা র্যাব ক্যাম্প স্থাপন করা হবে, যাতে পাহাড়ের পরিবেশ স্থিতিশীল থাকে।
১৬ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যায় রাঙামাটির জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তিন পাবর্ত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত বিশেষ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সারাদেশ থেকে আলাদা কোন ভূখন্ড নয় যে, যে যেভাবে খুশি সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যাবে। দেশের সমতল অঞ্চলের মতো পাহাড়েও কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ঘাঁটি গড়ে তুলে খুন, সন্ত্রাস, জঙ্গি, চাঁদাবাজিসহ অপরাধ তৎপরতা চালাতে দেয়া হবে না, যেকোন মূল্যে পাহাড় হতে সন্ত্রাসীদের শিকড় উপড়ে ফেলা হবে। সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্টী কর্তৃক বেশ কয়েকটি অপরাধ তৎপরতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পাহাড়ে হঠাৎ করে রক্তপাত শুরু হয়েছে; নির্বিঘ্নে, নির্বিচারে এবং ঠান্ডা মাথায় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের খুন করা হয়েছে। যার সবই সরকার পর্যবেক্ষন করছে। কোন অপরাধীকে বাংলার মাটিতে অপরাধ করে পার পেতে সুযোগ দেয়া হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাহাড়ে যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে তারা যদি নিজেদের ভুল স্বীকার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তার নির্দেশনা পেলে সন্ত্রাসীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসময় তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আগ্রহীদের স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করার প্রস্তাবও দেন।
পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনীর সার্বক্ষনিক নজরদারি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে ভারত ও মায়ানমারের সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবৈধ অস্ত্র আসা প্রতিরোধ, মাদক ও চোরাচালন প্রতিরোধ সহ সীমান্ত সুরক্ষায় ভারত ও মায়ানমারের সীমান্ত এলাকায় সড়ক যোগাযোগ উন্নত করা হবে। এছাড়া পাহাড়ী এলাকার দুর্গমতার বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জলযান, সড়কযান, আকাশযান দেওয়া হবে। পুলিশ বাহিনীকেও হেলিকপ্টার ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। সভায় উপস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপিদের উদ্দেশ্য করে এসময় তিনি বলেন, পাহাড়ের সব জায়গায় বিচরণের জন্য বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীকে স্থল যান, জল যান ও হেলিকপ্টার দেয়া হবে, এরপর আর পাহাড়ে দুর্গম এলাকা বলে কিছু থাকবে না।
 সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেন, “আমি এখানকার বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের চলমান তৎপরতার তথ্য শুনে অবাক হয়েছি। আমরা দীর্ঘক্ষন মিটিং করলাম। যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি শৃঙ্খলায় নিয়োজিত রয়েছেন তাদের থেকে শুনছিলাম, সন্ত্রাসীরা কোথা থেকে সাহায্য পায়, কিভাবে বিচরণ করে। কিভাবে এই এলাকায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে তার-ই একটা ইতিহাস শুনছিলাম। এটি শুনে ব্যথিত হয়েছি আমি। আমাদের পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারের সব প্রধানগণ এবং সেনাবাহিনীর যারা এখানে দায়িত্ব পালন করছেন তারাসহ গোয়েন্দা সংস্থারাও সভায় উপস্থিত ছিলেন। আমরা মনে করি এই ধরনের ঘটনা যদি ঘটতে থাকে তাহলে আমাদের এই জায়গাটিতে শান্তির যে সুবাতাস বইছিলো, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে এখানে একটি শান্তিচুক্তি করে যে শান্তির সুবাতাস নিয়ে এসেছিলেন, সেটা হয়তো বিনষ্ট হবে। এটা আমরা কখনো হতে দেবো না। শান্তি চুক্তিকে অনুসরণ করে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল, আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম, হেলিকপ্টার, উন্নতমানের জলযানসহ যা যা দরকার তার সবটুকুইে এখানে প্রদান করা হবে। ইতিমধ্যেই আমরা পাহাড়ের বিরাজমান সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের গতি বাড়ানোর নির্দেশনা প্রদান করেছি।”
সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেন, “আমি এখানকার বাহিনী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের চলমান তৎপরতার তথ্য শুনে অবাক হয়েছি। আমরা দীর্ঘক্ষন মিটিং করলাম। যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি শৃঙ্খলায় নিয়োজিত রয়েছেন তাদের থেকে শুনছিলাম, সন্ত্রাসীরা কোথা থেকে সাহায্য পায়, কিভাবে বিচরণ করে। কিভাবে এই এলাকায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে তার-ই একটা ইতিহাস শুনছিলাম। এটি শুনে ব্যথিত হয়েছি আমি। আমাদের পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারের সব প্রধানগণ এবং সেনাবাহিনীর যারা এখানে দায়িত্ব পালন করছেন তারাসহ গোয়েন্দা সংস্থারাও সভায় উপস্থিত ছিলেন। আমরা মনে করি এই ধরনের ঘটনা যদি ঘটতে থাকে তাহলে আমাদের এই জায়গাটিতে শান্তির যে সুবাতাস বইছিলো, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে এখানে একটি শান্তিচুক্তি করে যে শান্তির সুবাতাস নিয়ে এসেছিলেন, সেটা হয়তো বিনষ্ট হবে। এটা আমরা কখনো হতে দেবো না। শান্তি চুক্তিকে অনুসরণ করে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল, আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম, হেলিকপ্টার, উন্নতমানের জলযানসহ যা যা দরকার তার সবটুকুইে এখানে প্রদান করা হবে। ইতিমধ্যেই আমরা পাহাড়ের বিরাজমান সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের গতি বাড়ানোর নির্দেশনা প্রদান করেছি।”
এদিন সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলা বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ শিং এমপি, রাঙামাটি আসনের এমপি দীপংকর তালুকদার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সচিব কামাল উদ্দিন আহমদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব মেসবাহুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান, পুলিশের মহা পরিচালক ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারী,বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমদ, বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান, পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ, রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার, তিন পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার, তিন পার্বত্য জেলার বিজিবি সেক্টর কমান্ডার, গোয়েন্দা সংস্থা সমূহের প্রধানগণ ছাড়াও সেনা, পুলিশ, বিজিবির অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় দিনের মত বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভা ও হেডম্যান-কার্বারী সম্মেলনে যোগ দিবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে গত ১৬ অক্টোবর বুধবার দুপুরে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় থানার নব-নির্মিত ভবন উদ্বোধন এবং মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের গত ৩রা মে রাঙ্গামাটির নানিয়াচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেএসএস (এমএন লারমা) দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে নিজ দপ্তরের সামনে গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষের আঞ্চলিক উপজাতি দলের সন্ত্রাসীরা। পরদিন ৪ঠা মে তার শেষকৃত্যে যোগ দিতে যাবার পথে নানিয়াচর সড়কে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের প্রধান তপনজ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ ৫ জন নিহত হন। এরপর চলতি বছরের গত ১৮ মার্চ ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে সাজেক থেকে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে ফেরার পথে উপজেলার ৯ মাইল সড়কে উপজাতি সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ব্রাশফায়ারে নিহত হন ৭ জন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর আরো একজনের মৃত্যু হয়।
