কক্সবাজারকে মাদকমুক্ত করতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বড় উদ্যোগ
![]()
নিউজ ডেস্ক
কক্সবাজার বহুদিন ধরে ইয়াবার প্রধান রুট হিসেবে পরিচিত। জেলার ১৯টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই মিয়ানমার থেকে ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ (আইস)সহ বিভিন্ন মাদক প্রবেশ করছে। বিশেষ করে ১৩ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার ক্যাম্পগুলো এখন ‘মাদক হটস্পট’-এ পরিণত হয়েছে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছে শক্তিশালী টাস্কফোর্স। গত ২২ জুলাই ১৫টি সংস্থার প্রতিনিধিকে নিয়ে গঠিত এই টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে রয়েছেন সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম।
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে— তিন মাসের মধ্যে মাদক নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান অগ্রগতি আনা হবে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার সাইফউদ্দীন শাহীন বলেন, “টাস্কফোর্সের কারণে সমন্বিত পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে। যৌথ অভিযান বেড়েছে, একই সঙ্গে মাদক জব্দ ও মামলা বৃদ্ধির হারও বাড়ছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্সবাজার হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়া ইয়াবা এখন জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বড় হুমকি। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ইয়াবা ব্যবসার বড় নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে। রাখাইন রাজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা দখলে নিয়ে তারা ইয়াবা কারখানার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করেই এই কারবার চালাচ্ছে।
টাস্কফোর্সে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, এনএসআই, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও শরণার্থী ত্রাণ কমিশনার অফিসের প্রতিনিধি রয়েছেন। ইতোমধ্যে যৌথভাবে অভিযান শুরু হয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিন মাসের মধ্যে কক্সবাজার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের অগ্রগতি আসবে।
তবে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানই যথেষ্ট নয়। স্থানীয়দের মধ্যে মাদকের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সীমান্ত এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থানও জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ওয়েজ রুটের কারণে দেশটি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের একটি প্রধান করিডর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ৮৩ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে।
জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (UNODC) তথ্য বলছে, বাংলাদেশে প্রবেশ করা মাদকের মাত্র ১০ শতাংশ ধরা পড়ে। আর প্রতিবছর মাদক কারবার থেকে প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে— শুধু চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই দেশে জব্দ হয়েছে এক কোটির বেশি ইয়াবা। অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা অভিযান ও বন্দুকযুদ্ধের পরও চোরাচালান ঠেকানো যায়নি।
তবে এবার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে টাস্কফোর্সের সমন্বিত পদক্ষেপ কক্সবাজারকে মাদকমুক্ত করার নতুন আশার সঞ্চার করছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।