আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে পড়েছে দাবিতে ভিত্তিহীন প্রচার
![]()
নিউজ ডেস্ক
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির সদস্যরা বান্দরবান সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করেছে এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভিডিওটি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং বাংলাদেশের নয়। এটি গত জুলাই মাসে থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্তে ঘটিত একটি ঘটনার ভিডিও।
প্রথমে ভিডিওটি প্রচার করে কিছু ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইল, যেখানে বলা হয়—“আরাকান আর্মির সদস্যরা বান্দরবান সীমান্তে প্রবেশ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।” এই দাবি ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়াতে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে।
কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ে প্রমাণ মিলেছে, ভিডিওটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায়, ভিডিওটি ১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে ‘WeaponsUpdate6767’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়। সেখানে ভিডিওটির ক্যাপশনে উল্লেখ ছিল—থাইল্যান্ডের সৈন্যরা কম্বোডিয়ার নাগরিকদের কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডে অবস্থিত ‘তা মোয়ান থম’ মন্দির পরিদর্শনে বাধা দিয়েছে।
দেখুনঃ https://perma.cc/3PM4-VVW9
পরে অনুসন্ধানে থাইল্যান্ডের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম পাতায়া পিপল-এর ১৫ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে ঘটনাটির বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, কম্বোডিয়ার নাগরিকরা ঐতিহাসিক ‘তা মোয়ান থম’ মন্দির পরিদর্শনে গেলে থাই সৈন্যরা বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং ঘটনাস্থলে কম্বোডিয়ার সেনারাও উপস্থিত হয়।
দেখুনঃ https://archive.ph/uTywX
একই তথ্য প্রকাশ করেছে থাইল্যান্ডের ইংরেজি দৈনিক দ্য ন্যাশন। তাদের ১৫ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের ফানম ডং রাক জেলার বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা ‘তা মোয়ান থম’ মন্দির ঘিরে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে মৌখিক তর্ক-বিতর্ক হয়।
প্রতিবেদনটি পড়ুনঃ https://archive.ph/x1xy2
এসব সূত্র যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া গেছে—বাংলাদেশের বান্দরবান সীমান্তে আরাকান আর্মির কোনো সদস্য প্রবেশ করেনি এবং ভিডিওটিও বাংলাদেশের নয়। এটি থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্তে সংঘটিত একটি ঘটনা, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভ্রান্তিকরভাবে বাংলাদেশের সাথে সম্পৃক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর প্রেস উইং জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত এই ভিডিওটি ও সংশ্লিষ্ট দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক। জনগণকে এমন বিভ্রান্তিকর ও ভুয়া তথ্য প্রচারে প্ররোচিত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রেস উইং-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় কোনো বিদেশি সশস্ত্র গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ বা সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের সব সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।”
উল্লেখ্য, পার্বত্য অঞ্চলে বিদেশি সশস্ত্র গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে—যা জনমনে উদ্বেগ তৈরি করছে। সেনাবাহিনীর প্রেস উইং স্পষ্ট করে বলেছে, এসব ভুয়া ভিডিও ও গুজবের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাই এমন মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।