পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাতিলের দাবি সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের
![]()
নিউজ ডেস্ক
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি’ নামক ‘অবৈধ কালো চুক্তি’ বাতিলের দাবিতে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মো. মোস্তফা আল ইহযায সভাটি সঞ্চালনা করেন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও সাবেক উপাচার্য আব্দুল লতিফ মাসুদ। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের এই দিনে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিতর্কিত অধ্যায় সৃষ্টি করে। তার মতে, চুক্তিটি সংবিধান, প্রশাসনিক কাঠামো ও ভূমিব্যবস্থায় অসংখ্য জটিলতা তৈরি করেছে এবং শুরু থেকেই এটি অসম ও রাষ্ট্রের মূল কাঠামোর পরিপন্থী ছিল। তিনি জানান, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপি, জামায়াতসহ সাত দলকে নিয়ে চুক্তির বিরুদ্ধে লংমার্চ করেছিলেন। চুক্তির ৭২ ধারার বহু অংশ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে তিনি বলেন, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সময় সেনাবাহিনীর মতামত না নেওয়া ছিল বড় ধরনের ত্রুটি।
প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উচিত চুক্তির ফলে সৃষ্ট নিরাপত্তা সংকট নতুনভাবে মূল্যায়ন করা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভারতীয় স্বার্থে পাহাড় থেকে প্রায় ২০০ সেনা ক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়ায় ভারত-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা জোরদারে অন্তত চারটি নতুন পদাতিক ব্রিগেড স্থাপনের দাবি জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাওয়ার চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) আব্দুল হক বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে পাহাড়ে বিদ্রোহ, হত্যা, অপহরণ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন—এসব কার্যক্রমে সেনাবাহিনীই ছিল প্রধান শক্তি। কিন্তু সেনাবাহিনীর বাস্তব অভিজ্ঞতা উপেক্ষা করে ভারতের পরামর্শে তড়িঘড়ি করে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। তার দাবি, চুক্তির পর সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংখ্যা একটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচ-ছয়ে দাঁড়িয়েছে এবং অস্ত্রধারী সদস্যের সংখ্যা এখন ৮০ থেকে ৯০ হাজারের মতো। অবৈধ অস্ত্রের পরিমাণ লাখ ছাড়িয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “চুক্তির মূল শর্ত ছিল অস্ত্র জমা দেওয়া; কিন্তু ২৮ বছর পরও সন্তু লারমার জেএসএস পুরো অস্ত্র জমা দেয়নি। বরং চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ ও অরাজকতা আরও বেড়েছে।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাসিমুল গণী, সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এইচ আর এম রোকন উদ্দিন, লে. কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এস এম জহিরুল ইসলাম (চেয়ারম্যান, আরজেএফ), ব্যারিস্টার শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার, আমিনুল ইসলাম বুলু, আব্দুল হান্নান আল হাদী, ড. শরিফ শাকি, মিজানুর রহমান, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, মু. সাহিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের প্রতিনিধিরা।
সভাপতির বক্তব্যে মোস্তফা আল ইহযায বলেন, দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী সমাধানের জন্য শান্তিচুক্তি বাতিল করে বাঙালি ও ১৩টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নতুন ‘সম্প্রীতি চুক্তি’ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, পাহাড়ের স্থায়ী শান্তির তিন স্তম্ভ—নিরাপত্তা, সংবিধান ও সমঅধিকার—আরও শক্তিশালী করার সময় এসেছে। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাস্তবমুখী নতুন কাঠামো এখন অপরিহার্য।
প্রসঙ্গত, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে শান্তিচুক্তিকে সংবিধানবিরোধী দাবি করে আসছে এবং চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের জোর দাবি জানিয়ে আসছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।