একদিনে ২শ মৃত্যুর রেকর্ড বাংলাদেশে
নিউজ ডেস্ক
করোনার ভয়াল রূপ যেন আস্তে আস্তে দেখতে শুরু করেছে দেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় আগের সব মৃত্যুর রেকর্ড ভেঙে আরো ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ হাজার ৫৯৩। এর আগে গতকাল ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছিলো।
এদিকে একই সময়ে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৫ হাজার ৬৩৯। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ১৬২ জন। এতে গত ২৪ ঘন্টার পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে।
অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৮ জন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৯৮৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ ৮ লাখ ৫০ হাজার ৫০২ জন।
দেশে মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে আজ বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। সেখানে ২৪ ঘন্টায় ৬৬ জন মারা গিয়েছে। এছাড়া ঢাকায় ৫৮ জন, চট্টগ্রামে ২১ জন, রাজশাহীতে ১৮ জন, বরিশালে ৭ জন, সিলেটে ৯ জন, রংপুরে ১৪ জন, এবং ময়মনসিংহে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে, গত এপ্রিলের রেকর্ড ভেঙে ২৭ জুন এক দিনে ১১৯ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, তার চার দিনের মাথায় ১ জুলাই ১৪৩ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়। তিন দিন পরেই আবারো সর্বোচ্চ ১৫৩ জনের মৃত্যু দেখে দেশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বোঝার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। সেখানে কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে রোগী শনাক্ত ২০ শতাংশের বেশি হচ্ছে।
বর্তমানে দেশের অধিকাংশ জেলা করোনার ভয়াবহতার ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৪ থেকে ২০ জুন নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাপ্তাহিক রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ; প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রথম মৃত্যুর আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়ায়। এরপর ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ অগাস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার ছাড়ায় মৃতের সংখ্যা।
এরপর কমে আসে দৈনিক মৃত্যু। ৪ নভেম্বর ৬ হাজার, ১২ ডিসেম্বর ৭ হাজারের ঘর ছাড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা। এ বছরের ২৩ জানুয়ারি ৮ হাজার এবং ৩১ মার্চ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়ায়।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর ১৫ দিনেই এক হাজার কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু ঘটলে গত ১৫ এপ্রিল মৃতের মোট সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর পরের এক হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটাতে মাত্র দশ দিন সময় নেয় করোনাভাইরাস; মোট মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায় ২৫ এপ্রিল।
তার ১৬ দিন পর ১১ মে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার এক মাস পর ১১ জুন তা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছিল। এর ১৫ দিন পর ২৬ জুন এই সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ৪ জুলাই ১৫ হাজার ছাড়ালো মৃত্যু।
দিনে মৃত্যুর রেকর্ডও হয়েছে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে। ১৯ এপ্রিল ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর ২৭ জুন মৃত্যু হয় ১১৯ জনের। ২৯ জুন আবার ১১২ জনের মৃত্যু হয়। ৩০ জুন মারা যান ১১৫ জন। ১ জুলাই মৃত্যু হয় রেকর্ড ১৪৩ জনের।
করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ১ জুলাই থেকে সারা দেশে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বোঝার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। সেখানে কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে রোগী শনাক্ত ২৫ শতাংশের বেশি হচ্ছে।