তালেবানকে ‘ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব’ আফগান সরকারের, সরিয়ে দেয়া হয়েছে সেনাপ্রধানকে
নিউজ ডেস্ক
সহিংসতা বন্ধে তালেবানের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছে আফগান সরকার। দুইপক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী কাতারের মাধ্যমে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে তালেবানের হাতে ১০ম প্রাদেশিক রাজধানী পতনের দিনে এ প্রস্তাব দিল কোণঠাসা আফগান সরকার। মার্কিন গোয়েন্দাদের বিশ্বাস, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে তালেবানের হাতে কাবুল সরকারের পতন হবে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গজনি প্রদেশের রাজধানী দখল করেছে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। শহরটি আফগান রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার দূরে। তীব্র লড়াই চলছে হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী ও আফগানিস্তানের অন্যতম বৃহত্তম শহর লস্কর গাহেও। ইতোমধ্যে সেখানকার আঞ্চলিক পুলিশ সদরদফতরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান।
আল জাজিরার খবর বলছে, তীব্র আক্রমণের মুখে তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন লস্কর গাহের একদল পুলিশ কর্মকর্তা। বাকিরা আশ্রয় নিয়েছেন এখনো সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা গভর্নর অফিসে। লড়াইয়ে সরকারি বাহিনীর অনেক সদস্য হতাহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এর সংখ্যা এখনো নিশ্চিত নয়।
এদিকে, কান্দাহার কারাগারে তাণ্ডব চালিয়েছে তালেবান। স্থানীয় নিরাপত্তা সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের একটি দল কান্দাহার কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে কয়েকশ’ বন্দিকে ছেড়ে দিয়েছে। কারাগারটিতে এর আগেও হানা দিয়েছিল তালেবান। তখনো অসংখ্য বন্দি পালানোর ঘটনা ঘটেছিল।
তালেবানের হামলা-সহিংসতায় চলতি বছর আফগানিস্তানজুড়ে অন্তত ৩ লাখ ৯০ হাজার মানুষ নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিশেষ করে, গত মে মাস থেকে এর হার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে অন্তত ৫ হাজার ৮০০ জন বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি কাবুলে পৌঁছে সংঘাত ও অন্যান্য হুমকি থেকে নিরাপত্তা চেয়েছেন। তবে এ ধরনের ভুক্তভোগীদের জন্য অতীতের হাজার কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা এখন কমে মাত্র ৮০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
এদিকে, আফগানিস্তানে একের পর এক প্রাদেশিক শহর তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যেই দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধানকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে দেশটির ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। দেশের ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে কমপক্ষে ৯টি এখন তালেবানের দখলে।
কান্দাহার এবং গাজনির বিভিন্ন শহরে তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে বুধবার উত্তরাঞ্চলীয় মাজার-ই শরিফ শহর সফর করেছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। আফগান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়ালি মোহাম্মদ আহমাদজাইকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিবিসি। তিনি গত জুনেই এই পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু অল্প কিছুদিনের ব্যবধানেই তাকে সরিয়ে দেয়া হলো। নতুন সেনাপ্রধানকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ দেশে সহিংসতা বেড়ে গেছে।
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার শুরুর পর থেকেই তালেবান সেখানে বেশ দ্রুতগতিতে বিভিন্ন এলাকা দখল করতে শুরু করে। তালেবান এরই মধ্যে আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ গ্রামীণ এলাকা দখল করে নিয়েছে। এখন তারা বড় বড় শহর টার্গেট করছে।
এর মধ্যেই ফাইজাবাদ, ফারাহ, পাল-ই-খুমরি, সার-ই-পাল, সেবেরঘান, আইবাক, কুন্দুজ, তালুকান এবং জারাঞ্জ শহর দখল করে নিয়েছে তালেবান। গত মে মাস থেকেই আগ্রাসী হয়ে উঠেছে তালেবান। এদিকে তালেবান দেশটির এক চতুর্থাংশের বেশি প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নেয়ার পরই পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী খালিদ পায়েন্দা।
গুরুত্বপূর্ণ কাস্টমস পোস্টগুলো তালেবানের দখলে চলে যাওয়ায় এই ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রাফি তাবি জানিয়েছেন, কাস্টমস পোস্টগুলো তালেবানের দখলে চলে যাওয়ায় দেশের রাজস্ব কমতে শুর করেছে। এ কারণেই পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন পায়েন্দা।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত এক মাসে আফগানিস্তানে যুদ্ধ-সংঘাতে এক হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির শীর্ষ উপদেষ্টা ওয়াহিদ ওমের বলেন, আমাদের জন্য এই সময়টা বেশ কঠিন। তবে আমরা জানি যে, আমরা অবশ্যই জয়ী হব। তিনি বলেন, তারা (তালেবান) হয়তো কিছু এলাকা দখল করে নিয়েছে। তবে এটা শুধু দখল করে নেয়ার বিষয় না। বরং এখানে সাধারণ নাগরিকরা গুরুত্বপূর্ণ। তারা তালেবানকে চায় না। আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করাটা যে ভুল ছিল সেটা তারা খুব শিগগিরই বুঝতে পারবে।