কক্সবাজার ক্যাম্পে বেড়ানোর সুযোগ পেলেন ভাসানচরের রোহিঙ্গারা - Southeast Asia Journal

কক্সবাজার ক্যাম্পে বেড়ানোর সুযোগ পেলেন ভাসানচরের রোহিঙ্গারা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ভাসানচরে থাকা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন। এক বছরের বেশি আগে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো তাদের এই সুযোগ দেওয়া হলো। এই প্রক্রিয়া চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভাসানচর থেকে ৬৫ জনের একটি দল স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে পৌঁছেছেন বলে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বীকার করেছেন ভাসানচর থেকে আরআরআরসি প্রতিনিধি ও ক্যাম্প-ইন-চার্জ (সিআইসি) জহিরুল ইসলাম।

তিনি মুঠোফোনে জানান, কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে স্বজনদের সাথে দেখা করতে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে তাদের কাছে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা আবেদন করেছিলেন। তারই ভিত্তিতে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ভাসানচরে বসবাসকারী ৬৫ জন রোহিঙ্গার একটি দল কক্সবাজারে রেখে আসা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। তবে প্রথম এই দলটি যদি ঠিকভাবে ফিরে আসে, তাহলে এ প্রক্রিয়াটি চলমান থাকবে। তারা সেখানে ৮ দিন থাকবেন। এরপর আবার ভাসানচরে ফিরে আসবেন।

এদিকে গত মঙ্গলবার সকালে নৌবাহিনীর একটি জাহাজ এসব রোহিঙ্গাদের ভাসানচর থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যায় । পরে সেখান থেকে দুটি বাসে করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী ১৭ ডিসেম্বর রোহিঙ্গাদের এই দলটি ভাসানচর ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর শুরু হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এ পর্যন্ত সেখানে গেছেন প্রায় বিশ হাজার রোহিঙ্গা। ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গারা শুরু থেকেই কক্সবাজারে যাতায়াতের দাবি জানালেও সরকার এতদিন রাজি হয়নি। তবে গত ৯ অক্টোবর ভাসানচরে রোহিঙ্গা শিবির দেখভালের দায়িত্বে জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ার পর আগের অবস্থান থেকে সরে আসে সরকার।

অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দৌজ্জা জানান, ভাসানচরে বসবাসকারীদের অনেক স্বজন এখনও কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জন্য ভাসানচরে বসবাসকারীরা সরকারের কাছে আবেদন করেছিল। সকল দিক বিবেচনা করে তাদের কক্সবাজার ক্যাম্পে থাকা স্বজনদের সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন পর রোহিঙ্গারা আবারও ভাসানচরে ফেরত যাবেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর সহযোগিতায় এক বছরের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ সক্ষম হবে বলে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

চুক্তির পরে নভেম্বরের শুরুতে দ্বীপটি দেখে আসে ইউএনএইচসিআর এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) যৌথ প্রতিনিধি দল। ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তার ১৩৭ দশমিক ২৮ টন মালামাল নিয়ে নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ ভাসানচরে পৌঁছায়।

‘আশা করি আমরাও সুযোগ পাব’
কক্সবাজারে থাকা স্বজনদের সাথে দেখা করতে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত আবেগাপ্লুত করেছে ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের।

এ ব্যাপারে ভাসানচরে বসবাসকারী রশিদা বেগম মুঠোফোনে বলেন, এখানে এসে ভেবেছিলাম আর কোনোদিন কক্সবাজারে থাকা স্বজনদের দেখতে পাব না। কিন্তু দীর্ঘ দিন পর ভাসানচর থেকে কক্সবাজারের ক্যাম্পে বসবাসকারী আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে এখান থেকে একটি দল গেছে। এটি সরকারের ভালো উদ্যোগ। আমিও কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করি এই দলটি ফিরলে আমরাও যাওয়ার সুযোগ পাব।

ভাসানচর স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের ক্যাম্পে স্বজনদের সাথে দেখা করার সুযোগ দেখে অনেকে ভাসানচরে যেতে উৎসাহিত হবে বলে মনে করেছেন উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পের নেতা মো. রফিক।

তিনি জানান, অনেক রোহিঙ্গা যাতায়াতের সুযোগ না থাকায় ভাসানচরে যেতে চায় না। ফলে এ সুযোগটা দেখে লোকজনের মাঝে ভাসানচরে যেতে উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সেনাদের অভিযান থেকে প্রাণে বাঁচতে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। এদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংস অভিযানের সময়ে পালিয়ে এসেছিলেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।