বিদ্রোহে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে হচ্ছে নতুন আনসার আইন
নিউজ ডেস্ক
বিদ্রোহ ও বিদ্রোহের প্ররোচনা এবং ষড়যন্ত্রের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নতুন ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২২’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার (২৮ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘১৯৯৫ সালের একটি আইন ছিল, চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধন করতে গিয়ে দেখা গেলো অনেক বেশি পরিবর্তন করতে হয়, সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলো এটা পরিবর্তন করার দরকার নেই, নতুন করে আনসার ব্যাটালিয়ন আইন প্রণয়ন করা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এটা ওনারা নিয়ে এসেছেন। আইনে ৩৩টি ধারা আছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আনসার ব্যাটালিয়নে একজন মহাপরিচালক থাকবেন, তিনি সরকারের নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে ব্যাটালিয়ন নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করবেন। মহাপরিচালক এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি-প্রবিধি এবং সরকারের জারি করা নির্দেশনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করবেন।’
‘সরকার আনসার ব্যাটালিয়নের সাংগঠনিক কাঠামো এবং পদ নির্ধারণ করে দেবে, নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি নির্ধারণ করে দেবে।’
খসড়া আইন অনুযায়ী ব্যাটালিয়নের কোনো সদস্য কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না জানিয়ে খন্দকার আনোয়ার বলেন, ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো আনসার সদস্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা কোনো সংবাদপত্র বা কোথাও কোনো তথ্য প্রকাশ করা বা এরসঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের মতো তাদেরও শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুযায়ী লঘু ও গুরুদণ্ড থাকবে। বিভাগীয় মামলায় আরোপিত গুরুদণ্ডের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের কাছে ও লঘুদণ্ডের বিরুদ্ধে মহাপরিচালকের কাছে আপিল করা যাবে।’
‘এই আইনে একটা বিশেষ জিনিস রয়েছে। সেটা হলো ব্যাটালিয়নে কোনো সদস্যের অপরাধ সংগঠনের জন্য বিচারের ব্যবস্থা রাখা রয়েছে। দুটি আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত থাকবে। একটা সংক্ষিপ্ত ব্যাটালিয়ন আদালত, আরেকটা বিশেষ আনসার আদালত।’
বর্তমানে কোনো আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত নেই জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ডিসিপ্লিনারি (অসদারচরণ) বিষয়ের জন্য আমাদের যেমন রুল আছে, তাদেরও থাকবে। ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিং হবে।’
‘বাহিনীর অস্ত্র, গোলাবারুদ, পোশাক, যন্ত্রাংশ ও যানবাহনের অংশ ইত্যাদি পরিকল্পিতভাবে বিনষ্ট করা ও এ সংক্রান্ত অপরাধের জন্য সংক্ষিপ্ত ব্যাটালিয়ন আদালতে সর্বোচ্চ তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও আর্থিক ক্ষতির ক্ষেত্রে সমপরিমাণ অর্থ অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে। অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। এটা হলো সাধারণ অপরাধের ক্ষেত্রে- চুরিটুরি বা কিছু নষ্ট করলো সেক্ষেত্রে।’
তিনি বলেন, ‘আর যদি অপরাধ শৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, বিদ্রোহের চেষ্টা করে বা প্ররোচনা দেন বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকেন। এ জাতীয় হলে সেক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড বা কমপক্ষে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হবে। এই বিচার হবে বিশেষ আনসার আদালতে।’
আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত যে রায় দেবেন সেই বিষয়ে আনসার ব্যাটালিয়ন আপিল ট্রাইব্যুনালে গিয়ে আপিল করা যাবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মহাপরিচালক সরকারের অনুমোদন নিয়ে আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক পদমর্যাদার তিনজন কর্মকর্তাকে নিয় সংক্ষিপ্ত আদালত গঠন করবেন জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। সরকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন, আইন ও বিচার বিভাগের একজন এবং আনসার ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে বিশেষ আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত গঠন করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই আদালত গঠন করবে।’