সামরিক জান্তার অধীনে নির্বাচন, বয়কটের ঘোষণা প্রবাসী সরকারের

সামরিক জান্তার অধীনে নির্বাচন, বয়কটের ঘোষণা প্রবাসী সরকারের

সামরিক জান্তার অধীনে নির্বাচন, বয়কটের ঘোষণা প্রবাসী সরকারের
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার অধীনে চলতি বছরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে এই নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি নেতৃত্বাধীন দেশটির জান্তাবিরোধী গণতন্ত্রপন্থি প্রবাসী সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)।

এনইউজি কেন এই নির্বাচন অংশ নিচ্ছে না সেটা জার্মানির মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের অবকাশে ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেছেন এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন মার অং। তিনি বলেন, ‘সামরিক জান্তার নির্বাচন আয়োজনের কোনো অধিকার নেই।’

তিনি আরও বলেন, সামরিক জান্তা মিয়ানমারের বেশিরভাগ এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। দেশের ৭০ ভাগের বেশি অঞ্চল এখন বিপ্লবী যোদ্ধাদের দখলে। এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে তারা নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে?
 
এনইউজির এই শীর্ষ কূটনীতিক আরও বলেন, সামরিক জান্তার নির্বাচন আয়োজনের কোনো বৈধতা নেই। মিয়ানমারের জনগণ ও ভোটাররা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে। তারা সামরিক জান্তার অধীনে নির্বাচন চায় না।
সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চলমান লড়াইয়ে এনইউজির নিয়ন্ত্রণ কতটুকু- এমন প্রশ্নের জবাবে জিন মার অং বলেন, বিদ্রোহী বাহিনী এনইউজির পাশাপাশি লড়াই করছে। তার কথায়, জান্তাবিরোধী লড়াইয়ে এনইউজি একা নয়। এনইউজি ও অন্যান্য জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য লড়াই করছে।’
 
তিনি আরও বলেন, লড়াইয়ে যুক্ত বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও জাতিগত গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাাপ চালিয়ে যাচ্ছে এনইউজি। আমরা ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় লড়াই করলেও আমাদের সবার শত্রু অভিন্ন। আর সেই শত্রু হলো সামরিক জান্তা।
 
এর আগে সম্প্রতি আল জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে এনইউজির মুখপাত্র জ কিঅ বলেন, ‘এই নির্বাচন হবে একটা প্রহসন, শুধুই লোক দেখানো।’ তার কথায়, ‘সামরিক জান্তা আশা করছে, এই প্রহসনের নির্বাচন করে কিছু দেশের কাছে বৈধতা পাবে।… কিন্তু এই নির্বাচন করে দেশে কোনো স্থিতিশীল পরিস্থিতি আসবে না। বরং আরও অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে, আরও বাড়বে সহিংসতা।
 
প্রায় চার বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে দুর্বল হয়ে পড়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বিশেষ করে ২০২৩ সালের শেষ থেকে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সেনা সরকার। বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেছে ৯১টি শহর এবং ১৬৭টি সেনা ঘাঁটি।
 
এনইউজি মুখপাত্র জ কিঅ বলেন, মিয়ানমারের ইতিহাসে সেনাবাহিনী এখন সর্বোচ্চ দুর্বল অবস্থায় আছে।….আমাদের প্রধান লক্ষ্য [২০২৫ সালে] হলো সেনাবাহিনীর একনায়কতন্ত্র নির্মূল করা।
গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারে ২০২০ সালের নভেম্বরে দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। 
 
কিন্তু ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের দিন অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। অং সান সুচিসহ এনএলডির অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। 
 
সেনাপ্রধান সিনিয়ার জেনারেল মিন অং হ্লাইং ওই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। এরপর সেনার নেতৃত্বে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএসি) নামে সরকার গঠন করা হয় যে সরকারের প্রধান হন হ্লাইং। এদিকে অভ্যুত্থানের পর যে প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয় তার অংশ হিসেবে সুচির অনুগতরা এনইউজি নামে সরকার প্রতিষ্ঠা করে।
 
কমিটি রিপ্রেজেন্টিং পিদংশু হ্লুত্তাও (সিআরপিএইচ) নামে একটি কমিটির মাধ্যে এই সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এতে এনএলডির পাশাপাশি একাধিক জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং আরও কিছু ছোট দল রয়েছে। একই সঙ্গে নিজস্ব সেনাবাহিনী পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) নামে একটি সশস্ত্র বাহিনীও গঠন করা হয়। সেই থেকে মিয়ানমার জান্তা সরকারকে উৎখাতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে এনইউজি।
 
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর দুই বছরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বারবার পিছিয়েছে জান্তা কর্তৃপক্ষ। তবে চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যেই চলতি বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন হতে পারে বলে আবারও আভাস দিয়েছে। নির্বাচনে বিরোধীদের অংশগ্রহণের সুযোগ ব্যাপকভাবে সীমিত করা হয়েছে।
 
এনইউজিও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে নির্বাচনের জন্য সামরিক জান্তার ঘোষিত নিবন্ধনের সময়সীমা পূরণ করতে না পারায় এনএলডিসহ মোট ৪০টি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়। যার মধ্যে এনইউজির প্রধান অংশীদার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিও রয়েছে। 
  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।