সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধ করাতকল, অবাদে চলছে গাছ কর্তন
 
                 
নিউজ ডেস্ক
স্বদেশপ্রীতি চাকমা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার ২৫৫নং মাইসছড়ি মৌজার হেডম্যান। মাইসছড়ির করাতকল মালিক সমিতির সভাপতিও তিনি। সংরক্ষিত বনাঞ্চল দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে তার ওপর। অথচ তিনি নিজেই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধভাবে স্থাপন করেছেন করাতকল। আর দিনে-রাতে অবৈধ করাতকলগুলো দিয়ে সমানতালে চলছে বনের কাঠ চিরাই।
খাগড়াছড়ি মং সার্কেলের মৌজাপ্রধান স্বদেশপ্রীতি চাকমার করাতকলটি প্রায় বছর পাঁচেক আগে মাইসছড়ি বাজারের অদূরে ৩নং ওয়ার্ডের নোয়াপাড়া এলাকার গহিন অরণ্যে স্থাপন করা হয়। তবে এই করাতকলটির নেই কোনো অনুমোদন। প্রয়োজন হয় না লাইসেন্সের।
বছরের পর বছর ধরে এই অবৈধ কর্মযজ্ঞ চলছে তার। তবে এ নিয়ে কখনও বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে। নির্বিকার উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এই করাতকল থেকে বীজিতলা রেঞ্জের আওতাভুক্ত সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আনুমানিক দূরত্ব দুই থেকে তিন কিলোমিটার।
তবে অবৈধভাবে এই করাতকল স্থাপনে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানিয়েছেন হেডম্যান স্বদেশপ্রীতি চাকমা। তিনি বলেন, ‘আমি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই করাতকল স্থাপন করেছি। তারা আমাকে সহযোগিতা করেছে।’
এদিকে মাইসছড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চৌধুরীপাড়া এলাকায় মূল সড়ক ঘেঁষে এমন অবৈধ আরও দুটি করাতকল রয়েছে। যার একটির মালিক হলেন মহালছড়ি উপজেলার ক্যায়াংঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কিরণ চাকমা। অন্য করাতকলটি প্রায় ১৪ বছর আগে স্থাপন করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী সাথোয়াই মারমা। লাইসেন্স ছাড়াই দিব্যি চলছে তাদের কাঠ চিরাইয়ের মহোৎসব।
ক্যায়াংঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কিরণ চাকমা বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো করাতকলের লাইসেন্স নেই। আইনে কাভার করে না বলে লাইসেন্স দেয়নি বন বিভাগ।’ সাথোয়াই মারমা বলেন, ‘প্রশাসন তো আমাদের কিছুই বলে না। ১৪ বছরে আমার করাতকলে কোনো সমস্যা হয়নি।’
বীজিতলা রেঞ্জের আওতায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে ৪৯৬৪.৫০ একর। এর মধ্যে ২৫৫নং মাইসছড়ি মৌজায় ১৩১২.৫০ একর এবং ২৫৭নং নুনছড়ি মৌজায় রয়েছে ৩৬৫২ একর। বীজিতলা রেঞ্জটি রাঙামাটি বন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হলেও ভৌগোলিক সীমানায় এর পুরোটাই খাগড়াছড়ি জেলায় অবস্থিত। এই সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘিরে গড়ে উঠেছে অন্তত সাতটি অবৈধ করাতকল। যেখানে প্রতিনিয়ত চলছে বনের কাঠ চিরাই। অথচ এসব করাতকল নিয়ে বন বিভাগ একেবারেই নীরব ভূমিকা পালন করছে।
বীজিতলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানান, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপনের কোনো সুযোগ বা নিয়ম নেই। নুনছড়ি ও মাইসছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘিরে অন্তত সাতটি করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। যার কোনোটিরই বৈধতা নেই। অনুমোদন ছাড়াই স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব করাতকলে দেদার বনের কাঠ কাটছে।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি করাতকলের আশপাশে বিভিন্ন প্রজাতির কাঠের বড় বড় স্তূপ রয়েছে। কোনো কোনো করাতকলে মজুদ করা কাঠের পরিমাণ ৮ থেকে ১০ হাজার ঘনফুটেরও বেশি। যেখানে রয়েছে সেগুন, গামারি, গর্জন, আকাশমনি, কাঁঠাল, চাঁপাফুল, গোদা, জামসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ।
মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবাইদা আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর গৃহায়ন প্রকল্প নিয়ে তিনি ২০ জুন পর্যন্ত ব্যস্ত থাকবেন। এরপর এসব অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে বন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রান্সপোর্ট পারমিশনে (টিপি)
নানা জটিলতার কারণে বনভূমি থেকে কাঠ পাচার বাড়ছে। বন বিভাগের নিরাপত্তা সরঞ্জামের অপ্রতুলতা এবং দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করছে বনখেকোরা।
