প্রত্যাবাসন আলোচনার মাঝে নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প নির্মান নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা!
 
                 
নিউজে ডেস্কঃ
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ব্যাপক নির্যাতনের মুখে সীমান্ত ফেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিপুল সংখ্যার রোহিঙ্গাদের স্বদেশ ফেরানোর মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে যে মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে রয়েছেন ঠিক সেই মুহূর্তে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের পাহাড়ী এলাকায় নতুন করে বসতি নির্মাণ করা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও শংকা। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কঠোর নির্দ্দেশনা থাকা সত্বেও কেন নতুন করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নির্মান করা হচ্ছে তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
তাছাড়া নতুন করে নির্মানাধীন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার গুহায় ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবিষ্কার করা হয়েছিল দু’টি হরকত জঙ্গি ঘাঁটি। এই জঙ্গি ঘাঁটি থেকে বহু অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সহ গ্রেফতার করা হয়েছিল ৪১ জন নিষিদ্ধ হরকত জঙ্গিকে। পরবর্তীতে আদালতে এসব জঙ্গিকে যাবজ্জীবন কারদন্ড দেয়া হয়েছিল। সেই সময় থেকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের লুন্ডাখালী পাহাড়ী এলাকাটির নাম হয় ‘হরকত পাহাড়।’
স্থানীয় প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে একদম নিরবে ক’দিনের মধ্যে নির্মান করা হয়েছে অন্তত কয়েকশ ঘর।
বিষয়টি নিয়ে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন-‘ রোহিঙ্গা শিবিরের দেখভাল করার কাজে নিয়োজিত ক্যাম্প ইনচার্জ মোহাম্মদ রাশেদ এলাকাবাসীর কোন কথা অমান্য করেই এসব ঘর নির্মাণ কাজ তদারকি করে চলেছেন। সরকারি এই কর্মকর্তা (ক্যাম্প ইনচার্জ) দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর স্বার্থকেই বড় করে দেখে যেন এসব কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, নারী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও বিদেশী অর্থায়নে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান এলাকাবাসীর আশংকার কথা তুলে ধরে বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এক সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনা নিয়ে রোহিঙ্গাদের আরাকান থেকে ২০১৭ সালের আগষ্ট পারবর্তী সময়ে মিয়ানমারের নির্যাতনের অজুহাত তুলে এপাড়ে নিয়ে এসেছে। এখনো পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা মাফিক আরাকানের বাদবাকি রোহিঙ্গাদেরও এপাড়ে নিয়ে আসার কাজ থেমে নেই-এমন দাবি ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীর।
এদিকে বৃহষ্পতিবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্টিত এক সভায় উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী গোপনে নতুন করে রোহিঙ্গা শিবির তৈরির উদ্বেগজনক তথ্য জানান। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, এধরণের উদ্যোগ এলাকাবাসীর কাছে নতুন করে আতংক সৃষ্টি করেছে। যে সময়ে গোটা দেশবাসী রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরাতে তৎপর এমন সময়ে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গোপনে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ‘হাতে নিয়ে’ শিবির নির্মাণের ঘটনাটি মোটেই কাম্য নয়। এ প্রসঙ্গে সীমান্তবর্তী এই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আরো বলেন, এতে করেই প্রমাণিত হয় বাস্তবে আরাকান থেকে রোহিঙ্গাদের এপাড়ে নিয়ে আসার বিষয়টি ছিল আন্তর্জাতিক গোষ্ঠির দীর্ঘদিনেরই পরিকল্পনা। তিনি আরো বলেন, বর্ষার সময় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ী এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অজুহাত দিয়েই নতুন করে দু’টি স্থানে নতুন শিবির করা হচ্ছে।
এসময় জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন-‘আমি এমন সময়ে এরকম খবরটি শুনে অবাক হলাম। কেননা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমার (জেলা প্রশাসক) কাছে কড়া নির্দেশনা রয়েছে যে, নতুন করে রোহিঙ্গাদের জন্য এক ইঞ্চি জমির জায়গাও দেয়া হবেনা।’ আমি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দ্দেশনা মোতাবেক কাজ করব। সেখানে নতুন করে রোহিঙ্গা বসতি করা হলে সেসব গুঁড়িয়ে দেয়ার নির্দ্দেশনা দেব।’ এসময় সভায় উপস্থিত উখিয়া উপজেলা সহকারি ভুমি কর্মকর্তা (এসি ল্যান্ড) ফখরুল ইসলাম জেলা প্রশাসককে জানান, স্থানীয় প্রশাসনের তরফে তারা এসব নতুন বসতি স্থাপনের ব্যাপারে অনেক বাঁধা দিয়েছেন। কিন্তু রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত প্রশাসন তাদের বাঁধা অমান্য করে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠির কথা মতই নতুন বসতি স্থাপনের কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত সচিব ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন-‘আমরা ইউএনএইচসিআর এর তহবিল নিয়ে এক স্থানে এ ধরণের সাড়ে তিনশ ঘর নির্মাণ করছি। অপরদিকে অন্যস্থানে বন বিভাগের সামাজিক আগর বাগানের ১০০ একর পাহাড়ী ভুমিতে আরো ৫০০ এর মত ঘর করছি। যা মোট জমির সাড়ে ৬ হাজার একরের ভিতর। আমরা কোনভাবেই সাড়ে ৬০০ হাজার একরের বেশী ব্যবহার করছি না।’ তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কারো ভুলবুঝাবুঝির অবকাশ নেই। তিনি আরো বলেন, এসব কাজ নতুন করে করা হচ্ছে না। এগুলো আগের কাজ মাঝখানে বন্ধ ছিল। তাই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা রোহিঙ্গাদের রাখার জন্যই এসব নির্মাণ করার কথা জানান তিনি।
