চট্টগ্রামের রাউজানে দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান, ২০টি দেশীয় অস্ত্রসহ বিপুল পরিমান সরঞ্জাম উদ্ধার
![]()
নিউজ ডেস্ক
চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে ডাকাতদলের একটি অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। এ সময় অভিযান চালিয়ে ২০টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, অস্ত্র তৈরির নানা সরঞ্জাম জব্দ ও মোঃ আলমগীর প্রকাশ আলম ডাকাতকে (৪১) আটক করা হয়েছে। এছাড়া অভিযানকালে ডাকাতদলের সদস্যের ছুরিকাঘাতে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেপায়েত উল্লাহ মারাত্নক আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। গত ২০ নভেম্বর বুধবার ভোররাতে পূর্ব রাউজান রাবার বাগান এলাকার ঘোড়া সামছু টিলায় এ অভিযান চালানো হয়। চার ঘণ্টা ধরে চলা অভিযানে পুলিশের সঙ্গে ডাকাতদলে সদস্যদের ২৫ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। আটককৃত আলম একই এলাকার সিদ্দিক বাড়ির মোঃ আব্দুল সাত্তারের ছেলে বলে জানা যায়।
ডাকাতদলের অস্ত্রের কারখানার সন্ধান পাওয়ার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, ‘রাউজান থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ডাকাতদলের অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ এক ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র কারা তৈরি করে, কারা কোথায় কিভাবে বিক্রি করে এবং এর নেপথ্যে আরো কারা জড়িত সেই বিষয়ে জানতে গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে রিমাণ্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।’ তিনি জানান ‘গত ২০ নভেম্বর বুধবার ভোররাতে রাতে ঘোড়া সামছুর টিলায় অস্ত্র বেচাকেনা হচ্ছে-এমন সংবাদ পেয়ে ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এ সময় ডাকাত আলমগীর ও তার সহযোগীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাঁচ রাউন্ড গুলি করে।’ ‘এক পর্যায়ে আলম তার হাতে থাকা অস্ত্র ফেলে দিয়ে দা হাতে নেয়। পালানোর সময় তাকে ওসি ধরতে যায়। কিন্তু আলম তার হাতে থাকা দা দিয়ে তাকে কোপ দেয়। এতে ওসির হাতে মারাত্মক আঘাত লাগে। এ ঘটনায় উপ-পরিদর্শক সাইমুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক মো. কামাল, উপ-পরিদর্শক হামিদ হোসাইনও আহত হন। এরপর অস্ত্রের কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র পায় পুলিশ।’
অভিযানে জব্দকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে দশটি দেশে তৈরি শর্টগান, একটি গ্যাসগান, আটটি পাইপগান, সাতটি কার্তুজের খোসা, তিনটি দেশে তৈরি একনলা বন্দুকের অংশ, ২৭টি কাঠের বাঁট, একটি লেদ মেশিন, একটি পাম্প বক্স, একটি লোহা কাটার বড় কাঁচি, একটি চিমটি, একটি লোহার ছোট কাঁচি, একটি পাইপের প্যাঁচ কাটার মেশিন, একটি প্লাস্টিকের তেলের বোতল, দুইটি হ্যান্ড ড্রিল মেশিন, তিনটি ড্রিল করার কাটি, কিছু কয়লা, একটি কয়লার আগুন ধরানোর মেশিন ও একটি দা।
পুলিশি সূত্রে আরো জানা যায়, আটককৃত আলম তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। তাঁর বিরুদ্ধে রাউজান, নগরের পাঁচলাইশ ও চান্দগাঁও থানায় খুন, ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে ১৭টি মামলা আছে। মাত্র ৫০ দিন আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়েছেন আলম। ১০ বছর সাজাভোগের পর মুক্তি পেয়ে তিনি পুনরায় অপরাধ জগতে ফিরে যান। আলম ২০০৩ সালে র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসী জানে আলমের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। এছাড়া সে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্যাডার সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়ার সহযোগীও ছিলেন।