গেরিলা নিয়ন্ত্রিত শান প্রদেশে চা ও কফি চাষের ঘোষনা মিয়ানমার সেনাপ্রধানের
![]()
নিউজ ডেস্ক
সামরিক বাহিনীর ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে গেরিলা নিয়ন্ত্রিত শান প্রদেশে চা ও কফি চাষ এবং এগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণের কেন্দ্র গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল মিয়াওয়াদিতে বলা হয়েছে, গত ২রা ডিসেম্বর সোমবার সাবেক পাও ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পিনলাউং টাউনশিপের নাউংতায়া সফরে গিয়ে সেখানকার অধিবাসীদের সাথে বৈঠকে সেনা প্রধান এ ঘোষনা দেন। সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, সামরিক বাহিনী পাও অঞ্চলের সমৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে। এছাড়া সংসদ সদস্য কো খুন অং কিয়াউ চা ও কফি চাষের বিষয়ে বলেছেন, “এটা এখনও পরিকল্পনার পর্যায়ে রয়েছে।

বর্তমানে ঐ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিতে চার হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে চা চাষ হয় এবং এখান থেকে উচ্চমানের চা পাওয়া যায়। সম্প্রতি এই অঞ্চলে রপ্তানির উদ্দেশ্যে কফি উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং তারা নতুন নতুন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, পাও ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (পিএনও) নিজেদের জাতিগত সন্ত্রাস ও গেরিলা সশস্ত্র কার্যক্রম বন্ধ করে ১৯৯১ সালে তৎকালীন সামরিক সরকারের সাথে অস্ত্র বিরতি চুক্তির পর নিজেদেরকে রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তোলে। তবে চুক্তি করলেও তারা তাদের একটি নিজস্ব গেরিলা বাহিনী সক্রিয় রেখেছে। যারা পাও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখাশোনা করে।
প্রসঙ্গত, মায়ানমারের ভাষাভাষীদের মধ্যে অন্যতম বড় জাতি শান সর্ববৃহৎ প্রদেশ শান প্রদেশে বসবাস করে। এরা অসংখ্য ক্ষুদ্র জাতিতে বিভক্ত। কৃষিপ্রধান শানেরা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হলেও এরা যোদ্ধা জাতি। এদের নিজস্ব ভাষা আছে। ১৩-১৫ শতকে উত্তর মায়ানমারে তারা আভা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। পরে বার্মিজ রাজারা তাদেরকে বর্তমান শান প্রদেশে ঠেলে দেন। ব্রিটিশ আমলে শান প্রদেশ কিছুটা স্বায়ত্ত্বশাসন ভোগ করতো। পরে ১৯৪৮ সালে তারা নিজস্বতা বজায় রেখেই ইউনিয়ন অব বার্মাতে যোগ দেয়। ১৯৬১ সালে জেনারেল নে ইউন ক্ষমতায় এসে শানদের সুযোগ সুবিধা কেড়ে নিলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত শান স্টেট আর্মি তাদের অস্ত্র কেনার টাকা জোগাড় করতো আফিম চাষ করে। বস্তুত ক্রমাগত যুদ্ধের খরচের চাপেই মায়ানমারসহ আশেপাশের দেশজুড়ে কুখ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের সৃষ্টি হয়। খুন সা নামের এক ভুঁইফোঁড় নেতা নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠন করে ফেলেন এই আফিমের টাকা দিয়ে। প্রায় ৫০ বছর ধরে শান প্রদেশে যুদ্ধ চলে। নানা সময়ে চীনা কুয়োমিন্টাং বাহিনী, বিভিন্ন শান বিদ্রোহী দল, মিয়ানমার সেনাবাহিনী, থাই সেনাবাহিনী এবং কম্যুনিস্ট যোদ্ধারা শান পর্বতমালা এবং আফিমের দখল নিয়ে যুদ্ধ করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও বিদ্রোহীরা সক্রিয় আছে।