পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক: গওহর রিজভী
 
                 
নিউজ ডেস্ক
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান, পার্বত্য চুক্তি দ্রুত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হোক। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই।” চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন নিয়ে কারও মনে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী।
গওহর রিজভী পার্বত্য এলাকার ভূমির সমস্যাকে পাহাড়ের মূল সমস্যা দাবি করে সরকার ভূমি সমস্যা সমাধানে কাজ করছে বলেও জানান। তিনি বলেন, “চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন হয়েছে। খসড়া বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যা দ্রুত কার্যকর করা হবে।”
গত ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি: প্রেক্ষাপট ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে গওহর রিজভী এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম পার্বত্য চুক্তির পর থেকে মন্ত্রণালয়ের নেওয়া নানা উন্নয়ন উদ্যোগের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘তৃতীয় পক্ষের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া আওয়ামীলীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের মাত্র দেড় বছরের মাথায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করতে সমর্থ হয়। এটি নিঃসন্দেহে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সফলতা ও দূরদর্শিতার বহিঃপ্রকাশ।’ সচিব বলেন, ১৯৯৭-৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন বাজেট ছিল ৫৩ দশমিক ৮০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ সালে বরাদ্দ হয়েছে ১ হাজার ১৭ কোটি টাকা।
বক্তারা বলেন, চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসম সাহসিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি জিয়া এবং এরশাদের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাহাড়ের মানুষকে ক্ষমতার অংশীদার করতে চেয়েছিলেন। এখন দৃষ্টি রাখতে হবে, জিয়া-এরশাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড যেন প্রাধান্য না পায়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, খাগড়াছড়ির সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রাঙামাটির পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চিং কিউ রোয়াজা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) পরিমল বিকাশ চাকমা, মং সার্কেলের প্রধান সা চি প্রু চৌধুরী, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জমির, বান্দরবান সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনন্দ বিকাশ চাকমা প্রমুখ।
এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য তিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং কিছু মৌজার হেডম্যান। ছিলেন তিন পার্বত্য জেলার আওয়ামী লীগের নেতা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। তবে তিন সার্কেলের মধ্যে শুধু মং সার্কেলের প্রধান উপস্থিত ছিলেন। চাকমা ও বোমাং সার্কেলের প্রধান বা তাঁদের কোনো প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ২২ বছর পূর্তি হয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার এই চুক্তি করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে ৭২টি ধারা ছিল। এই ধারাগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে সরকার ও চুক্তি সম্পাদনকারী জেএসএস অবস্থানে অনেক ভিন্নতা আছে। সরকার বলছে, চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়িত হয়েছে। অন্যদিকে জেএসএসের দাবি, এর মৌলিক বিষয়গুলোই অবাস্তবায়িত থেকে গেছে।
