অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের পাঁচ মাস পরও অগ্রগতি নেই

অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের পাঁচ মাস পরও অগ্রগতি নেই

অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের পাঁচ মাস পরও অগ্রগতি নেই
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। মার্চে কক্সবাজারের উখিয়ায় সফরকালে তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও চাপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। কিন্তু এরপর মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ার পাশাপাশি উল্টো আরও রোহিঙ্গাকে বলপূর্বক বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থবিভাগের সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যাবাসন নিয়ে চলমান আলোচনা কার্যত ঝুলে পড়েছে। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করতেও ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এই প্রেক্ষাপটে আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে, যাতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘ প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশ নেবেন। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক শরণার্থী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিষয়ক এক বিশেষ অধিবেশনেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি উত্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গা সংকটে সরকারের ব্যয় বহুলাংশে বেড়ে গেছে। ফলে ইউএনএইচসিআর ও বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক প্রত্যাবাসন বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি জানতে চাওয়ায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু করেছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চলছে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সহায়তা আমরা পাচ্ছি না। অথচ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে এটি অত্যন্ত জরুরি।”

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির ঢাকা সফরের সময়ও প্রত্যাবাসন, অর্থনৈতিক চাপ, নিরাপত্তা ঝুঁকি ও রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পুনর্বাসন বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। ফিলিপ্পো বাংলাদেশের প্রশংসা করলেও বাস্তবে তার আশ্বাসের কোনো বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি।

সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের সময় বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার আলোচনা স্থানীয় জনগণের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়ে। মিয়ানমার ও ইউএনএইচসিআর উভয়ই এই প্রতিক্রিয়াকে নেতিবাচকভাবে নিয়েছে, যার ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আরও জটিলতা তৈরি হয়।

জাতিসংঘ ও ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে তৃতীয় কোনো নিরাপদ দেশে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের প্রস্তাব থাকলেও তা এখনো কাগজেই সীমাবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রও এ প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে, তবে বাস্তবায়ন এখনও অনিশ্চিত।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “জাতিসংঘ এ ইস্যুতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা মূলত অকার্যকর একটি সংস্থায় পরিণত হয়েছে, যাকে কেউ পাত্তা দেয় না। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত কোনো সমাধান হবে বলে মনে হয় না।”

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলের অনাগ্রহ ও মিয়ানমারের অমানবিক আচরণের কারণে এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।