বিদ্রোহী দমনে ইউরোপের ড্রোন ব্যবহার করছে মিয়ানমারের জান্তা

বিদ্রোহী দমনে ইউরোপের ড্রোন ব্যবহার করছে মিয়ানমারের জান্তা

বিদ্রোহী দমনে ইউরোপের ড্রোন ব্যবহার করছে মিয়ানমারের জান্তা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

বিদ্রোহী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর ইউরোপীয় প্রযুক্তি ড্রোন ব্যবহার করছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। জান্তা বাহিনীর এমন কার্যক্রমের জেরে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোরের আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

প্রতিবেদনে ব্রিটিশ গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, মিয়ানমার ইস্যুতে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কনফ্লিক্ট আরমামেন্ট রিসার্চ (সিএআর)।  তারা বলছে, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে দেশটির নাগরিক ও বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে দমনে ব্যাপকহারে হামলা চালাচ্ছে। হামলায় তারা অ্যান্টি জ্যামিং প্রযুক্তির ব্যবহার করছে, যা কি না ইউরোপের সৃষ্ট এবং চীনে তৈরি।

সিএআরের গবেষকরা দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় কায়াহ রাজ্যে ভূপাতিত সামরিক ড্রোনের তথ্য নথিভুক্ত করেছেন। ওই সব ড্রোনে উন্নত নেভিগেশন মডিউল লাগানো ছিল যা ড্রোনগুলোকে জ্যামিং ও সিগন্যাল স্পুফিং থেকে রক্ষা করে।  মিয়ানমারের পশ্চিম সীমান্তে থাকা চীনা রাজ্যে একই ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে গবেষকরা।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকারকে উৎক্ষাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে দেশটি সংঘাত লেগে আছে। সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে। তারা বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষমতাও নিয়েছে।

গার্ডিয়ান বলছে, গত ১২ মাসে বিদ্রোহেীদের দমনে সবচেয়ে বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে জান্তা।  এমনকি ড্রোন প্রযুক্তির পেছনে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে। আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন ও ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্টের তথ্যানুযায়ী, ড্রোন সম্পর্কিত বিষয়ে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিধর দেশ মিয়ানমার।

১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকে বিভিন্নভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে মিয়ানমার। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের জেরে ২০১৮ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও বিস্তৃত করা হয়। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞাগুলো যথেষ্ট বিস্তৃত নয় এবং এসব পদক্ষেপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পৃথক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর ন্যস্ত।

জাস্টিস ফর মিয়ানমার নামের একটি সংগঠনের মুখপাত্র ইয়াদানার মাউং বলেন, ‘এমন গবেষণা প্রতিবেদনে আমি বিস্মিত নয়।  এটি সেই ধারাবাহিকতারই অংশ, যেখানে যোগাযোগ সরঞ্জাম, স্পাইওয়্যার, ইউএভি (মানববিহীন আকাশযান) যন্ত্রাংশ, বিমান ও নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজের জন্য প্রপালশন সিস্টেম রপ্তানি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান জান্তা সরকারের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এমনটা করলে জান্তা বাহিনী কিছুটা দমবে।  এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নিষেধাজ্ঞার আওতা আরও বাড়াতে হবে। জান্তা যেন অর্থ, অস্ত্র ও তেল না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। এমনটা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সহযোগী দেশগুলোকে সঙ্গে নিতে হবে।’

সিএআরের প্রধান গবেষক রবার্ট হান্টার পার্কিনস বলেন, ‘ড্রোন যুদ্ধনীতি বিশেষ চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, কারণ এটি দ্রুত বিকাশমান। বাণিজ্যিক বাজারে এখন যে ধরণের প্রযুক্তি পাওয়া যাচ্ছে, তা কয়েক বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। শিল্পক্ষেত্রের উদ্ভাবনগুলোকে জাতীয়, আর অবশ্যই আন্তর্জাতিক, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা কঠিন।’

জান্তা বাহিনীর ব্যবহৃত ড্রোনগুলোতে যে অ্যান্টি জ্যামিং প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো ইউরোপের কোন দেশের তা প্রতিবেদনে জানায়নি সিএআর।  পার্কিনস বলেন, ‘প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি তাদের পণ্যের অপব্যবহার রোধে সম্ভাব্য সব ধরণের চেষ্টা করেছে। ’

সিএআর বলছে, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালের মার্চে তাদের পণ্য চীনের একটি পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠায়। ওই পরিবেশক প্রতিষ্ঠান পরে বড় একটি চালান চীনভিত্তিক আরেকটি পণ্য সংযোজক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে। ওই প্রতিষ্ঠানটি ইউএভিতে যন্ত্রাংশ একত্রিত করে। ২০২৪ সালের মার্চে ওই পণ্য সংযোজক প্রতিষ্ঠানটি আবার পণ্যটি বিক্রি করে রুইলিভিত্তিক একটি কোম্পানির কাছে, যা চীন-মিয়ানমার সীমান্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র।

তবে পরিবেশক ও পণ্য সংযোজক প্রতিষ্ঠান কোনো অনৈতিক কাজের প্রমাণ পায়নি সিএআর।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।