জেএসএসের নারী গুপ্তচর সিমলা চাকমার দ্বৈত নাগরিকত্বের রহস্য

জেএসএসের নারী গুপ্তচর সিমলা চাকমার দ্বৈত নাগরিকত্বের রহস্য

জেএসএসের নারী গুপ্তচর সিমলা চাকমার দ্বৈত নাগরিকত্বের রহস্য
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

ডেস্ক রিপোর্ট

পার্বত্য চট্টগ্রাম বরাবরই নানা জটিলতা, ষড়যন্ত্র ও বহিঃশক্তির আগ্রাসী রাজনীতির শিকার। এর ভেতরে একের পর এক উন্মোচিত হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য, যা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছে সিমলা চাকমা নামের এক নারীর দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং পার্বত্য চুক্তি পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস সন্তু লারমা গ্রুপ)-এর গুপ্তচর কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার অভিযোগ। তার পারিবারিক ইতিহাস, ব্যক্তিগত জীবন, নথিপত্র ও রাজনৈতিক যোগাযোগ—সবকিছু মিলিয়ে সিমলা চাকমা এখন সর্ব অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

সিমলা চাকমার পিতা ধন্ডরাজ চাকমা ও মাতা রবি মালা চাকমা। বাংলাদেশের ঠিকানা রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার বনযোগিছড়া ইউনিয়নের দোকানঘাট এলাকায় হলেও ভারতের একটি স্থায়ী ঠিকানাও তার রয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যের গন্ডাছড়া এলাকার মোগপাড়া গ্রামে তার নাম নথিভুক্ত। ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরও একাধিক, যা বহুমুখী যোগাযোগ কার্যক্রমের ইঙ্গিত দেয়। ভারতের নাগরিক হিসেবে তার হাতে রয়েছে বিভিন্ন বৈধ নথি। এর মধ্যে আছে সারভাইভাল সার্টিফিকেট, পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট, ত্রিপুরার ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং আধার কার্ড। এসব প্রমাণই দেখায় তিনি ভারতীয় পরিচয়ে বৈধভাবে নথিভুক্ত।

অন্যদিকে বাংলাদেশেও তিনি নিজেকে নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হিরো চাকমা নামের এক ব্যক্তির সাথে তার বিয়ের দলিল, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পারিবারিক পরিচয় বিদ্যমান। আবার ২০১৬ সালে খাগড়াছড়িতে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের একটি হলফনামা তৈরি হয়, যেখানে তার জন্ম তারিখ ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়। দুই দেশে তার জন্মতারিখের অমিল, স্বামীর পরিচয়ে বৈপরীত্য এবং একাধিক ঠিকানা ব্যবহার ইঙ্গিত করে যে তিনি সচেতনভাবে দ্বৈত পরিচয় কাজে লাগাচ্ছেন।

May be an image of ticket stub and text

সিমলার পারিবারিক সূত্রও জেএসএস সশস্ত্র শাখার সাথে সম্পৃক্ত। জানা যায়, তার মেঝো ভাই সরাসরি এই সংগঠনে সক্রিয়। ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও আছে নানা বিতর্ক। চারবার বিয়ে এবং একাধিক সম্পর্কের তথ্য উঠে এসেছে। এমনকি পরিকল্পিতভাবে তাকে সন্তান জন্মদানের অক্ষম করে নির্দিষ্ট গোয়েন্দা কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তার বিলাসবহুল জীবনযাপন, সীমান্ত এলাকায় অবাধ যাতায়াত এবং ভারতে সরকারি নথি সংগ্রহের সক্ষমতা তাকে সাধারণ থেকে অসাধারণ করে তুলেছে। ফলে তার গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, সিমলা চাকমা সরাসরি জেএসএস নেতা সন্তু লারমার সাথে যোগাযোগ রাখছে। সূত্র বলছে, সে পাহাড়ে নানা ধরনের গোপন তথ্য সংগ্রহ করছে এবং বিশেষ প্রয়োজনে ভারতে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি রাঙামাটির কলেজগেট মৈত্রীপাড়ায় অবস্থান করছেন এবং জবনিকা চাকমা ও দীপ্তিময় চাকমার বাসায় থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এখান থেকেই তার যোগাযোগ ও তৎপরতা সমন্বয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিমলার মতো দ্বৈত নাগরিকত্বধারী নারী গুপ্তচরের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলছে। একাধিক বৈধ সরকারি নথির সুযোগে তিনি সহজেই সীমান্ত অতিক্রম করতে পারছেন, পরিচয় বদলাতে পারছেন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিচ্ছেন। জন্ম তারিখ ও বৈবাহিক তথ্যের অসঙ্গতি তার কার্যক্রম গোপন রাখার কৌশল হিসেবে কাজ করছে। আর জেএসএস সশস্ত্র শাখার সাথে পারিবারিক সংযোগ তাকে সরাসরি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সিমলা চাকমার মতো গুপ্তচরের কার্যক্রম রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য এক গুরুতর হুমকি। তার বহুমুখী পরিচয়, অসঙ্গত নথি এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ প্রমাণ করে যে, তাকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্রুত নজরদারি ও পদক্ষেপ ছাড়া এ ধরনের কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।