কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রথমবার বোর্ড পরীক্ষা: শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নতুন উদ্যোগ

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রথমবার বোর্ড পরীক্ষা: শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নতুন উদ্যোগ

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রথমবার বোর্ড পরীক্ষা: শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নতুন উদ্যোগ
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক কাঠামোয় বোর্ড পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শরণার্থী কমিউনিটির উদ্যোগে গঠিত ‘এক্সামিনেশন বোর্ড অব রোহিঙ্গা রিফিউজিস’-এর তত্ত্বাবধানে শুরু হওয়া এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ক্যাম্পের অন্তত ৫০টিরও বেশি কমিউনিটি-ভিত্তিক স্কুলের শিক্ষার্থী। গতকাল শুরু হওয়া মিডটার্ম পরীক্ষায় পঞ্চম, নবম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করছে।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, পরীক্ষাটি সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমারের নতুন পাঠ্যক্রম ও পরীক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা কমিউনিটি স্কুল নিউ লাইফ কমিউনিটি হাইস্কুলের শিক্ষক ইয়াজুল হক বলেন, “শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই মূলত এ পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এতদিন শরণার্থী শিশু-কিশোররা কোনো মূল্যায়ন ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারছিল না। তাদের পড়াশোনাকে সংগঠিত ও কাঠামোবদ্ধ করতেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।”

২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসার পর থেকে শরণার্থী ক্যাম্পে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকলেও এবারই প্রথম পরীক্ষার আয়োজন হলো আনুষ্ঠানিকভাবে। ক্যাম্পে কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন প্রায় ৫৩টি স্কুল এ বছরের এপ্রিল মাসে একত্রিত হয়ে গঠন করে ‘এক্সামিনেশন বোর্ড অব রোহিঙ্গা রিফিউজিস’। এ বোর্ডের মূল লক্ষ্য হলো রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত মানোন্নয়ন ও মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা।

এ পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ক্যাম্পের বিভিন্ন কমিউনিটি স্কুল যেমন—রোহিঙ্গা লাইফ ডেভেলপমেন্ট হাইস্কুল, রোহিঙ্গাস ফিউচার লাইফ, নিউ লাইফ কমিউনিটি হাইস্কুল, মাইউ লাইট কমিউনিটি হাইস্কুল ইত্যাদি। তারা নিজেদের ফেসবুক পেজে পরীক্ষার চিত্র তুলে ধরেছে, যেখানে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, শিক্ষকদের তত্ত্বাবধান এবং স্থানীয় কমিউনিটির সমর্থন। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এ পরীক্ষাকে ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে অন্যতম প্রতিষ্ঠান মাইউ লাইট কমিউনিটি হাইস্কুল, যা বর্তমানে ক্যাম্প-১৩-এ প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করছে। এ বিদ্যালয়ে প্রায় ২০ জন রোহিঙ্গা শিক্ষক কাজ করছেন।

সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, “রোহিঙ্গারা নিজেদের উদ্যোগে দুই শতাধিক স্কুল চালাচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে। এনজিও পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমের চেয়ে তাদের নিজস্ব উদ্যোগের প্রতি আগ্রহ বেশি। নিজেদের ভাষায় ও অর্থের বিনিময়ে পাঠদান হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই তুলনামূলক মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হয়। এজন্য আলাদা কেন্দ্রীয় বোর্ড গঠন করে সমন্বিত পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। তবে এ কার্যক্রমের সঙ্গে সরকারের শিক্ষা কার্যক্রম বা এনজিওগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।”

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা শিবিরে এ ধরনের পরীক্ষার আয়োজনকে স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা একটি নতুন উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন, যা দীর্ঘদিন ধরে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অন্ধকারে থাকা রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।