হঠাৎ ঘোলা বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বগা লেকের পানি! - Southeast Asia Journal

হঠাৎ ঘোলা বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বগা লেকের পানি!

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক লেক বগা লেককে বাগাকাইন লেক অথবা বাগা লেকেইসও বলা হয়ে থাকে। বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দুরে রুমা-কেওক্রাডাং নির্মাণাধীন সড়কের ১ হাজার ৭৩ ফুট পাহাড়ের উচ্চতায় বগা লেক অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় থেকে প্রায় ৩০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত বগা লেকের আয়তন প্রায় ১৫ একর। নীলপানির এই লেকটির সৃষ্টির পেছনে বেশকিছু কল্পকাহিনী রয়েছে। বেশীরভাগ পর্যটক শীতকালে বগা লেকে বেড়াতে আসেন। বগা লেকের পাশে স্থানীয় ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্টী বম ও খুমি সম্প্রদায়ের দেখা মিলবে। বর্ষাকালে এই লেকের পাশে হাঁটা কঠিন হয়ে পড়ে। বগা লেকের ভিতরে ও বাইরে ছড়িয়ে রয়েছে বিশালাকারের পাথর।

বগা লেক সৃষ্টি নিয়ে বম, মারমা, ম্রো, খুমি ও ত্রিপুরাদের পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বগা লেক ছিল একটি সমৃদ্ধ ম্রো গ্রাম। গ্রামের পাশে একটি সুড়ঙ্গে বড় আকারের সাপ থাকত। ওই সাপ ধরে গ্রামবাসী খেয়ে ফেলে। ওই সাপ খাওয়ায় নাগরাজার প্রতিশোধের কারণে গ্রামবাসীসহ গ্রামটি দেবে গিয়ে বগা লেকের সৃষ্টি হয়েছে। এখনো অনেক বম ও ম্রোর বিশ্বাস যে, লেকের গভীরে থাকা নাগরাজ লেজ নাড়ালে পানি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। তবে পাহাড়ের চূড়ায় মনোরম বগা লেক দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভিড় করে।

সম্প্রতি বান্দরবানের অন্যতম জনপ্রিয় এই পর্যটন কেন্দ্র কোন ধরণের বৃষ্টিপাত ছাড়াই নিজে থেকে হঠাৎ ঘোলা হয়ে উঠেছে। গত ৫দিন ধরে ঘোলা হওয়া পানি অদ্যাবদি পরিষ্কার হয়নি বলে জানা গেছে। এছাড়া পানি থেকে উৎকট গন্ধ বের হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় বম সম্প্রদায়ের লোকেরা। তবে পরিবেশবিদরা মনে করছেন এ সমস্যার কারণ জানতে হলে অবশ্যই বগা লেকের পানি পরীক্ষা ও বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন।

স্থানীয় লালকিম বম জানান, গত শুক্রবার সকাল থেকে লেকের পানি ঘোলা হতে শুরু করে। এখন সম্পূর্ণ কাদামাখা পানির মতো ঘোলাটে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে লেকের পানি নীল স্বচ্ছ থাকে। কিন্তু এখন লেকের চেহারা মাটির রঙের মতো হয়েছে। ঘোলা পানি থেকে উগ্র কাদার গন্ধ বের হচ্ছে। এ জন্য পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়েছে। গোসলও করা যাচ্ছে না। বগা লেকের পানি ঘোলা হওয়া এবার প্রথম নয় জানিয়ে রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ালদো বম বলেন প্রতি তিন-চার বছর পর একবার পানি এ রকম ঘোলা হয়ে ওঠে। পাঁচ থেকে সাত দিন ঘোলা থাকার পর আবার পরিষ্কার হয়ে যায়। কোনো কোনো বছর ১০ দিনও পানি ঘোলা থাকে।

রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামসুল আলম বলেন, কেন নির্দিষ্ট একটি সময়ে বগা লেকের পানি ঘোলা হয়, তা বলা মুশকিল। পানির গভীরে কোনো আলোড়ন সৃষ্টির কারণে অথবা কোনো জলজ উদ্ভিদ নির্দিষ্ট সময়ে মরে পচে গেলে পানি ঘোলা হতে পারে।

এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম ২০০৫ সালে বগা লেকের পানির গভীরতা পরিমাপ করেছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বগা লেকের পানির গভীরতা ১১৫ ফুট। এত গভীরে লেকের তলদেশে কী আছে জানা নেই। পানি ঘোলার কারণ পরীক্ষা না করে বলা সম্ভব নয়। এ জন্য এখনই ঘোলা পানি আহরণ ও সংরক্ষণ করে পরীক্ষা করা জরুরি। বগা লেকের পানি ঘোলা হওয়ার কারণের বিষয়ে বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম শাহ আলম খান বলেন, এই লেক তিনি কখনো দেখেননি। তবে পানি ঘোলা হওয়ার কিছু কারণ অনুমান করতে পারেন মাত্র। বগা লেকের উঁচুতে পাহাড় আছে। অধ্যাপক শাহ আলম খানের সেই অনুমান হলো, বৃষ্টির সময় পাহাড়ের গায়ে পানি সঞ্চিত থাকে। এটা দেখা যায় না অন্য সময়। এটা ধীরে ধীরে নিচের দিকে আসে। মাটির নিচের পানির স্তরের সঙ্গে হয়তো লেকের আগে কোনো যোগাযোগ ছিল। তিনি বলেন, ‘কোনো কারণে উঁচু জায়গার পানিটা বেশি বেগে নিচে চলে যাচ্ছে। এর ফলে লেকের তলায় থাকা কাদা আন্দোলিত হয়ে ভেসে উঠছে। আমি এটুকুই আন্দাজ করতে পারি।’