পাকিস্তান-বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠতা: ‘চিকেনস নেক’-এর নিরাপত্তায় কৌশলগত পদক্ষেপ ভারতের

পাকিস্তান-বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠতা: ‘চিকেনস নেক’-এর নিরাপত্তায় কৌশলগত পদক্ষেপ ভারতের

পাকিস্তান-বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠতা: ‘চিকেনস নেক’-এর নিরাপত্তায় কৌশলগত পদক্ষেপ ভারতের
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে, তখন এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। নয়াদিল্লি আশঙ্কা করছে, এই নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ তার আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। এ পরিস্থিতিতে ভারত সীমান্তে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যা শুধু নিজের নিরাপত্তাই নিশ্চিত করবে না, বরং ঢাকা সরকারের ওপরও চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

‘চিকেনস নেক’ কী?

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সিলিগুড়ি শহরকেন্দ্রিক এই সরু ভূখণ্ডটির প্রস্থ সবচেয়ে সংকীর্ণ স্থানে মাত্র ২০–২২ কিলোমিটার। ভৌগোলিকভাবে এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যকে মূল ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে। করিডরটির পশ্চিমে নেপাল ও পূর্বে বাংলাদেশ, আর উত্তরে ভুটান অবস্থিত। অঞ্চলটির কৌশলগত গুরুত্ব বিবেচনায় ভারত এখন বিহারের জোগবানি হয়ে নেপালের বিরাটনগর পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নিউ মল জংশন পর্যন্ত নতুন রেললাইন স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ

ভারতের আশঙ্কা আরও বেড়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মিরজার ঢাকা সফরের পর। তিনি বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।

এর আগেও বাংলাদেশের কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার বক্তব্যে ভারতের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সাবেক বর্ডার গার্ড (তৎকালীন বিডিআর) প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) এ এল এম ফজলুর রহমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘যদি ভারত পাকিস্তানের ওপর আক্রমণ চালায়, তবে বাংলাদেশ সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্য দখল করে নেবে। এজন্য চীনের সঙ্গে যৌথ সামরিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ভারত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরও নয়াদিল্লিতে অস্বস্তি তৈরি করেছে। গত ২৬ থেকে ২৯ মার্চের সফরে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য, যেগুলোকে “সেভেন সিস্টার্স” বলা হয়, সেগুলো স্থলবেষ্টিত অঞ্চল—সমুদ্রপথে তাদের কোনো সরাসরি প্রবেশাধিকার নেই। আমরা এই অঞ্চলের একমাত্র “সমুদ্র অভিভাবক”।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই অবস্থান আমাদের জন্য বিরাট সম্ভাবনা তৈরি করছে। এটি চীনের অর্থনীতির সম্প্রসারণ হিসেবেও কাজ করতে পারে—উৎপাদন, বিপণন, পণ্য পরিবহন ও রপ্তানিতে নতুন সুযোগ তৈরি হবে।’

নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদের বক্তব্যে নয়াদিল্লি মনে করছে, বাংলাদেশ-চীন ঘনিষ্ঠতা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন কূটনৈতিক সম্পর্ক ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক প্রভাবের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সীমান্তে নতুন সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে ভারত এই পরিস্থিতিতে প্রতিরোধমূলক অবস্থান নিচ্ছে।

কী পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত?

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে তিনটি নতুন গ্যারিসন বা সেনাঘাঁটি স্থাপন করেছে ভারত। এগুলো হলো আসমের বামুনি, বিহারের কিশনগঞ্জ ও পশ্চিমবঙ্গের চোপড়ায়। এই ঘাঁটিগুলো স্থাপনের মাধ্যমে নয়াদিল্লি সুরক্ষিত করতে চায় তথাকথিত ‘চিকেনস নেক’ বা ‘সিলিগুড়ি করিডর’—ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের একমাত্র স্থলসংযোগ।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed