দীঘিনালার রসিক নগরে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের আড়ালে বাঙালিদের ভূমি দখলের অভিযোগ

দীঘিনালার রসিক নগরে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের আড়ালে বাঙালিদের ভূমি দখলের অভিযোগ

দীঘিনালার রসিক নগরে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের আড়ালে বাঙালিদের ভূমি দখলের অভিযোগ, এলাকায় উত্তেজনা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের রসিক নগর গোলছড়ি এলাকায় বাঙালি মুসলিম ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের বৈধভাবে ক্রয়কৃত জমিতে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের নামে ভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহ ধরে নীরবতার ভেতরে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়ে ওঠা এই দখল প্রচেষ্টায় স্থানীয়দের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, পুরো ঘটনাটির পেছনে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফের প্রত্যক্ষ ইন্ধন রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই চাকমা সম্প্রদায়ের একটি অংশ পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু করে। অথচ ১৩ নভেম্বর বাঙালি মালিকানাধীন প্রায় ৫ একর জমিতে গাছ কাটা, জঙ্গল উজাড় এবং কাঠ–বাঁশ দিয়ে স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হলে জমির মালিক মোঃ সেলিম ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় প্রশাসন তখন সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউপিডিএফের মদদে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আবারও নির্মাণ শুরু করা হয়েছে। লাল রঙের কাপড় দিয়ে জায়গাটি ঘিরে ‘বৌদ্ধ বিহার বা ভাবনা কেন্দ্র’ নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হয় এবং স্থায়ী শৌচাগার নির্মাণের কাজও শুরু করা হয়।

স্থানীয়দের আশঙ্কা, একবার ধর্মীয় স্থাপনার কাঠামো দাঁড়িয়ে গেলে দখল স্থায়ী রূপ নেবে এবং পরে তা অপসারণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।

সূত্র বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণের আড়ালে ভূমি দখলের ঘটনা নতুন নয়। বৌদ্ধ বিহার, ক্যায়াং বা ভাবনা কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কিংবা সরকারি খাস জমি দখলের অভিযোগ বহুবার উঠেছে।

স্থানীয়দের মতে, একবার কোনো স্থাপনা পাকা রূপ নিলে দখলদারগোষ্ঠী সেটিকে “ধর্মীয় উপাসনাস্থল” হিসেবে দাবি করে এবং যে কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগকে “ধর্ম পালনে বাধা” হিসেবে আখ্যা দেয়। ফলে প্রকৃত মালিকানা প্রশ্ন অনেক সময়ই উপেক্ষিত থেকেছে।

একই এলাকায় যদি কোনো মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন অনুমতি, পরিবেশগত প্রভাব, স্থানীয়দের আপত্তি ইত্যাদি নানা অজুহাত সামনে আসে। কিন্তু বৌদ্ধ বিহার বা গির্জা নির্মাণের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম-কানুন অনেক সময়ই শিথিল থাকে—এ অভিযোগও জানায় স্থানীয়রা।

দীঘিনালার রসিক নগরের এই পরিস্থিতি আরও স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে কারণ সম্প্রতি লক্ষীছড়ির বর্মাছড়িতে বন বিভাগের জমিতে নিরাপত্তার স্বার্থে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগও ‘ধর্মীয় শুদ্ধতা নষ্ট হবে’ অভিযোগ তুলে ব্যাহত করা হয়। নিরাপত্তাজনিত উদ্যোগ যখন ধর্মীয় অজুহাতে বন্ধ হয়ে যায়, তখন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ক্ষেত্রে একই কৌশল আরও ভয়াবহভাবে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ।

এলাকাবাসী বলেন, দেরিতে ব্যবস্থা নিলে ভূমি দখল স্থায়ী রূপ নেবে এবং ভবিষ্যতে কোনো স্থাপনা অপসারণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। প্রশাসনের প্রতি তাদের দাবি—উভয় সম্প্রদায়ের জমির কাগজপত্র যাচাই করে বৈধ মালিক চিহ্নিত করতে হবে এবং ধর্মীয় অজুহাতে চলমান নির্মাণ কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

উল্লেখ্য, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *