খাগড়াছড়িতে রাজনৈতিক মতাদর্শ বদল: বিএনপির দাবি জামায়াত, জামাতের দাবি আওয়ামী লীগ কর্মী
![]()
নিউজ ডেস্ক
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা উপজেলায় সম্প্রতি রাজনৈতিক দল পরিবর্তনের একটি ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শনিবার (২২ নভেম্বর) রাতে খাগড়াছড়ি সদরে জেলা বিএনপি সভাপতির বাসভবন বৈঠকে গুইমারা উপজেলা বিএনপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে নতুন নেতা-কর্মীদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম সোহাগ এবং প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও খাগড়াছড়ি–২৯৮ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ওয়াদুদ ভূঁইয়া।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন সংযুক্তিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছয়জন এবং জামায়াতে ইসলামী থেকে চৌদ্দজন নেতা-কর্মী ছিলেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম.এন. আবছারসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি আশা প্রকাশ করেছে, নতুন সংযুক্তি দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শক্তিশালী করবে।
তবে, ঘটনাটি রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। একদিন পর আজ রবিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে গুইমারা উপজেলা জামায়াত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, তালিকাভুক্ত কেউই জামায়াত বা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য নয়। সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, কেউ আগে থেকেই বিএনপির সঙ্গে যুক্ত, আবার কেউ ছিল আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য বা স্থানীয় ব্যবসায়ী।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে—জালিয়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়, হাজিপাড়ার আব্দুল আজিজ পুরনো বিএনপি কর্মী, ইকবাল হোসাইন অতীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এবং মোস্তফা গুইমারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। এছাড়াও অভিযোগ করা হয়েছে, কিছু দিনমজুরকেও ‘ঘুরতে নিয়ে যাওয়া’র কথা বলে বিএনপিতে যোগদান দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
উপজেলা জামায়াতের তথ্য ও মিডিয়া সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, “চাপ, হুমকি ও রাজনৈতিক নাটক দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বিএনপিতে ভেড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ব্যর্থ হলে পূর্বে থেকে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত কিছু ব্যক্তিকে জামায়াত-শিবির কর্মী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এটি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ।”
উপজেলা জামায়াতের আমির মো. রফিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, “ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে মিথ্যাচার ও হুমকির মাধ্যমে নাটক সাজানো হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর জনগণ জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করছে। ঈর্ষার কারণে এই নাটক সাজানো হয়েছে, যা জনগণের সমর্থন কমাতে পারবে না।” সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই ঘটনা খাগড়াছড়ির রাজনৈতিক চিত্রকে আরও জটিল করেছে। যেখানে এক দলে যোগদানকে কেন্দ্র করে বিএনপি দাবি করছে—নতুন কর্মীরা জামায়াত থেকে এসেছে, আবার জামায়াতের দাবি—যে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা যোগদান দেখানো হয়েছে তারা আসলে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে পূর্বে যুক্ত। এই দ্বিমুখী দাবি রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
উল্লেখ্য, এই ধরনের ঘটনার প্রভাব সাধারণ ভোটারদের কাছে বিভ্রান্তিকর বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে আস্থা ও সমর্থনের দিক থেকে প্রভাব ফেলতে পারে। নির্বাচনী মরশুমের আগে এমন রাজনৈতিক ঘটনা ও বিভ্রান্তি খাগড়াছড়ির রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও অস্থিতিশীল করছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।