ভারতে মুসলিম শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মাদক মামলায় ফাঁসায় পুলিশ!
![]()
নিউজ ডেস্ক
ভারতের সেরা থানাগুলির তালিকায় নবম স্থান পাওয়া মধ্যপ্রদেশের মালহারগড় পুলিশ স্টেশন এখন চরম অপমানের মুখে। সম্প্রতি হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে বিস্ফোরক তথ্য সামনে এসেছে। এই থানারই পুলিশ অফিসাররা এক নিরীহ ছাত্রকে চলন্ত বাস থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং পরে তাকে ২.৭ কেজি আফিমসহ আটক দেখিয়ে ভুয়া মাদক পাচারের মামলায় ফাঁসিয়েছিল।
পুলিশ যাকে বড়সড় মাদক উদ্ধার বলে দাবি করেছিল। এই ঘটনা ক্ষমতা ও আইনের চরম অপব্যবহারের এক জঘন্য উদাহরণ হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। এই কেলেঙ্কারির পর মান্দসৌরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) সরাসরি হাইকোর্টের সামনে দাড়িয়ে স্বীকার করতে হয়েছে যে, মামলাটি সম্পূর্ণ সাজানো ছিল।
১৮ বছর বয়সী সোবহান, মালহারগড়ের একজন দ্বাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। গত ২৯ আগস্ট তাকে জোর করে একটি চলন্ত বাস থেকে নামিয়ে আনা হয়। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে পুলিশ ঘোষণা করে যে, সে ২.৭ কেজি আফিমসহ ধরা পড়েছে এবং পরদিনই তাকে আদালতে পেশ করা হয়, যেখান থেকে তাকে জেলে পাঠানো হয়।
কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইলে তোলা ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান এক সম্পূর্ণ ভিন্ন কাহিনি বলছে। সমস্ত প্রমাণে দেখা যায়, সেখানে কোনও মাদক ছিল না, ছিল না কোনও ধাওয়া বা বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা। ছিল শুধুমাত্র সাদা পোশাকে থাকা কয়েকজন পুলিশ অফিসারের একটি দলকে যারা বাস থামিয়ে ছাত্রটিকে টেনে নামিয়ে তার সঙ্গে উধাও হয়ে যায়।
ছাত্রের পরিবার ৫ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের ইন্দোর বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। তারা অবৈধ অপহরণ, বেআইনি গ্রেফতার এবং মিথ্যা প্রমাণ সাজানোর অভিযোগ আনে।
মঙ্গলবার এই মামলার শুনানির সময় হাইকোর্ট মান্দসৌরের পুলিশ সুপার বিনোদ কুমার মীনাকে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়। এসপি মীনা আদালতে স্বীকার করেন, সোবহানকে মালহারগড় থানার পুলিশ অফিসাররাই বাস থেকে তুলে নিয়েছিল। তিনি আরও জানান, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে গ্রেফতারের যে সময় ও স্থান দেখানো হয়েছে, তা ভিডিওতে ধরা পড়া আসল সময় ও অবস্থানের সঙ্গে একেবারেই মেলে না।
এই পুরো অপারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছিল মালহারগড়ের এক হেড কনস্টেবল। ছাত্রটিকে অবৈধভাবে হেফাজতে নেওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল এবং তদন্তে কোনও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
এই ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়ে এসপি মীনা আদালতকে নিশ্চিত করেন, বাসে ওঠা যে অফিসারদের পুলিশ প্রথমে অস্বীকার করেছিল, তারা সকলেই মালহারগড় থানার পুলিশ কর্মী ছিলেন। এর ফলে জেলা প্রশাসনের দেওয়া আগের বিবৃতিও মিথ্যা প্রমাণিত হলো।
এসপি মীনা আদালতকে জানিয়েছেন, ছাত্রটিকে বাস থেকে টেনে নামানোসহ অভিযুক্ত ৬ জন মালহারগড় পুলিশ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্ট এই মামলার রায় স্থগিত রেখেছে। আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিমাংশু ঠাকুর বলেন, আদালত সমস্ত প্রমাণ দেখেছেন। আদালত মেনে নিয়েছে যে সোবহানকে অবৈধভাবে বাস থেকে অপহরণ করা হয়েছে এবং বিকেল ৫টায় তাকে ২.৭ কেজি আফিম-সহ গ্রেপ্তারের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। সে প্রথম বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণি পাস করা একজন উজ্জ্বল ছাত্র। এসপি আদালতে স্বীকার করেছেন যে মালহারগড় পুলিশ বেআইনিভাবে এবং আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।