যুগে যুগে দেশের ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান - Southeast Asia Journal

যুগে যুগে দেশের ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

সৈয়দ ফারুক হোসেন

দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও জাতীয় উন্নয়নে সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আপোসহীন ও রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী। সেনাবাহিনী পেশাদারিত্বের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। পাশাপাশি বিশ্ব শান্তিরক্ষায়ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি প্রতিশ্রুতিশীল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির জন্য এক গর্ব ও অহংকারের প্রতিষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের সবার গর্ব ও অহংকারের প্রতিষ্ঠান। একটি দেশের সেনাবাহিনী সে দেশের রক্ষা কবচ। তারা নিজ জীবনের বিনিময়ে দেশ ও জাতিকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। দেশ ও জাতির জন্য তারা জীবন দিতে সদা প্রস্তুত। তারা দেশের অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করে থাকে। দেশের যে কোনো দুর্যোগ তথা বিপদ-আপদে যে কোনো কাজ করতে বদ্ধপরিকর। তেমনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ও মানুষের গর্বের এবং গৌরবের বিষয়। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতা ও ধৈর্যের সাথে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে যে কোনো সময়ে যে কোনো কঠিন কাজ সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে নিষ্ঠা ও সততার সাথে করে আসছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসার ও সৈনিকগণকে সরকার যে কোনো সময়ে যে কাজে নিয়োজিত করছে সে কাজ করে তারা দেশ ও জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবিলা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই অত্যন্ত প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলছে। শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রেই নয় দেশ ও বিদেশে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, টনের্ডো, ঘূর্ণিঝড়, জঙ্গিদমন এবং বেসামরিক প্রশাসনকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে সহকারী বেসারকারি কাজকে গতিসঞ্চার করে আসছে।

ছবি-১: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে অসহায় এক ভিক্ষুককে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করছেন এক সেনাসদস্য।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা। এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্ববৃহৎ শাখা। সেনাবাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা সহ সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তায় প্রয়োজনীয় শক্তি ও জনবল সরবরাহ করা। সেনাবাহিনীর সব ধরনের কর্মকান্ড সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সেনা শাখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রাথমিক দায়িত্বের পাশাপাশি যেকোন জাতীয় জরুরি অবস্থায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাংবিধানিক ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।যুদ্ধ পরবর্তী দেশ গঠনে, বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগ এবং অসামান্য অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ তার সশস্ত্র বাহিনীর উপর গর্বিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের বলিদান ও অবদান অমূল্য ছিল। পাশাপাশি, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের সময়ে, তারা তাদের মানব পরিসেবাগুলির জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রদানে প্রতিরক্ষামূলক অবদানের জন্য প্রশংসার দাবিদার। ২০০৮ সালে শুরু হওয়া বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা, বাংলাদেশের শক্তিশালী সহায়তা মার্কিন সাধারণ পরিষদের প্রশংসা কুড়ায়। বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের শান্তিক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সৈন্য এবং পুলিশ সদস্য রয়েছে, যারা চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি নিরাপত্তা সহায়তাও প্রদান করছেন।

সেনাবাহিনীর সদস্যদের ত্যাগ ও সাহসী ভূমিকার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বিরাজ করছে এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। দেশের যেকোন প্রয়োজনে ও মাতৃভূমির সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন-‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ ও ‘অপারেশন টোয়াইলাইট ’ এর মাধ্যমে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনাসহ যে কোন জাতীয় সমস্যা মোকাবেলায় সেনাবাহিনী তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে। মিয়ানমার হতে বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে দায়িত্ব গ্রহণের পাশাপাশি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা ও চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেনাবাহিনী দেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময়ই বিপন্ন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ও আমাদের জাতীয় উন্নয়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার কাজেও সশস্ত্র বাহিনীর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ছবি-২: বয়ষ্ক এক দুঃস্থ নারীর বাড়িতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন সেনাসদস্যরা।

বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের বাংলাদেশে সংক্রমণ ও বিস্তৃতির সম্ভাব্যতা এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তে কোয়ারেন্টিনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব। এ অবস্থায় করোনা প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে একমাত্র পন্থা হিসেবে স্বীকৃত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যতটা পারা যায় জনসমাগম এড়িয়ে চলার পাশাপাশি ঘরে থাকা।করোনার ভাইরাসের আতঙ্কে কাঁপছে বাংলাদেশ। মারণ রোগের প্রকোপ থামাতে এবার কড়া পদক্ষেপ নিল হাসিনা সরকার। এবার বিদেশ থেকে ফিরে বিমানবন্দরে নামার পরই যাত্রীদের সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে যেতে হবে। বিশ্বজুড়ে মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সেনাবাহিনীকে দু’টি কোয়ারান্টাইন ক্যাম্পের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সেগুলি হল, বিমানবন্দর সংলগ্ন হজ ক্যাম্প এবং উত্তরার দিয়াবাড়ি সংলগ্ন রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট কোয়ারান্টাইন সেন্টার।এবার বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকে নির্বাচিত ব্যক্তিদের বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় ইমিগ্রেশন শেষে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। হস্তান্তরের পর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ সকল যাত্রীদের বিমানবন্দর থেকে কোয়ারান্টাইনে স্থানান্তর, ডিজিটাল ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রম, কোয়ারান্টাইনে খাওয়া থেকে আনুষঙ্গিক সেবার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, যে সব এলাকায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেই এলাকা প্রয়োজনে লকডাউন করা হবে। বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দুরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে সেনাবাহিনী প্রশাসনকে সহায়তায় নিয়োজিত হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে তারা জেলা ও বিভাগীয় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা পর্যালোচনা করছে। সেনাবাহিনী বিশেষ করে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কেউ নির্ধারিত কোয়ারেন্টিনের বাধ্যতামূলক সময় পালনে ত্রুটি বা অবহেলার করছে কিনা তা পর্যালোচনা করছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা এজন্য স্থানীয় আর্মি কমান্ডারের কাছে সেনাবাহিনী কর্তৃক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য আইনানুসারে অনুরোধ জানাবেন। গণপরিবহন চলাচল সীমিত রাখা এবং জনসাধারণকে যথাসম্ভব গণপরিবহন পরিহারে পরামর্শ দেওয়ার কাজ ও করছে সেনাবাহিনি। যারা জরুরি প্রয়োজনে গণপরিবহণ ব্যবহার করবেন তাদের অবশ্যই করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সেনাবাহিনি। গাড়িচালক এবং সহকারীদে অবশ্যই মাস্ক ও গ্লাভস পড়াসহ পর্যাপ্ত সতর্কমূলক ব্যবস্থা ও গ্রহণ করছে তারা।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুদ্ধিমান নেতৃত্বে সেনাবাহিনী যথাসম্ভব কাজ করছে। এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার প্রতিজ্ঞা করে তারা মানুসের সেবায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় সারাদেশে তাদের কাজ পরিচালনা করছে। করোনার ধাক্কায় গোটা বিশ্ব যখন দিশেহারা তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ পরিস্থিতি সামলে চলেছে দৃঢ়চিত্তে।

ছবি-৩: অসুস্থ প্রতিবন্ধি নারীকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন এক সেনাসদস্য।

করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য টেস্টের আওতা বৃদ্ধি, সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি, লোকজনকে নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করানো, কোয়ারেন্টাইনে রাখতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ- এসব পদক্ষেপ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জরুরি ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা। বিশেষ করে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কেউ নির্ধারিত কোয়ারেন্টাইনের বাধ্যতামূলক সময় পালনে ত্রুটি/অবহেলা করছে কি-না, তা পর্যালোচনা করছে সেনাবাহিনিরা।সেনাসদস্যরা সারাদেশেই করোনাভাইরাস সম্পর্কিত জনসচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছেন। প্রত্যন্ত এলাকায় উপস্থিত হয়ে যাদের হোম কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে থাকার কথা তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। সামাজিক দূরত্ব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে মাঠে-ঘাটে সার্বক্ষণিক তদারকিতে আছেন। সাধারণ জনগোষ্ঠীকে মাইকিং করে নিয়মিত হাতধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বিবিধ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানাচ্ছেন। কোনো এলাকায় রোগে আক্রান্তদের যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা প্রদানে যেমন সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করে দিয়েছেন তেমনি পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার জন্য তাদের তরফ থেকে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। দুস্থদের ত্রাণকাজে অব্যবস্থাপনা দূর করার জন্য সহযোগিতা করছেন তেমনি কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে কিংবা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করলে তা ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তাৎক্ষণিক বিচার করে শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। চরাঞ্চল কিংবা পাহাড়ি উপত্যকায় বাজার চালু রাখা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, গরিবদের মধ্যে খাবার বিতরণে সহায়তা করা, বিভিন্ন ধরনের গুজব ও অসত্য তথ্য যাতে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার কাজও তাদের করতে হচ্ছে। দেশের মানুষকে বাসায় ঢুকিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সচেতনতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তারা। অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য সাম্রগী বিতরণ করে মুখে হাসি ফেরান সেনাবাহিনী।এছাড়াও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে টহল জোরদার করেছে সেনাবাহিনী। এলাকায় সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তারা। মাইকিং করে সেনারা জনগণকে অযথা ঘুরে ফেরা না করে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহবান জানান। পাশাপাশি দুস্থ ও খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষের মধ্যে চাল, ডাল, আলু, লবণ ও তেলসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় এসব খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব পদবীর সদস্যদের একদিনের বেতনের পাশাপাশি সেনা কল্যাণ সংস্থা, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড, বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেড ও ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের পক্ষ থেকে সর্বমোট ২৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় সব নৌ-সদস্যদের এক দিনের বেতন ও নৌবাহিনী পরিচালিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বমোট ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং সব বিমান সেনাদের এক দিনের বেতন বাবদ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে দেওয়া হয়েছে । রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৬২ জেলায় করোনা মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সারা দেশে চলছে সশস্ত্র বাহিনীর এই কার্যক্রম। তারা জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অবস্থান করে ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে করোনার বিরুদ্ধে সবচাইতে কার্যকর পদ্ধতি ‘সামাজিক দূরত্ব’ সৃষ্টিতে সহায়তা করে আসছে। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনায় জীবাণুনাশক পানি স্প্রে, বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাপনা তৈরি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে আরো বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে সশস্ত্র বাহিনী। করোনা মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকায় টহল জোরদার, জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার ও দুঃস্থদের ত্রাণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এছারা তাদের ঘাঁটির নিকটবর্তী স্থানগুলোতে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করে। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে পায়ে হেঁটে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে ছুটে যায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। প্ল্যাকার্ড নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে তারা। সেখানে কারো হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘ঘনঘন হাত ধুই, করোনা থেকে নিরাপদ রই’। অপর এক প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘বিদেশ থেকে এসেছি যারা, কোয়ারেন্টাইনে থাকব তারা’। এ ছাড়াও করোনা নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে লেখা অপর এক প্ল্যাকার্ডে বলা হয়েছে ‘আতঙ্ক না ছড়াই, সতর্ক থাকি সাহায্য করি’। সেনাবাহিনীর সদস্যরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের তালিকা প্রস্তুত এবং বিদেশ হতে প্রত্যাগত ব্যক্তিবর্গের কোয়ারেন্টাইনে থাকা নিশ্চিত কল্পে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সমূহে সহায়তা ও সমন্বয় করছে। এ ছাড়াও সেনাবাহিনী বিভাগ এবং জেলা পর্যায়ে প্রয়োজনে মেডিকেল সহায়তা প্রদান করছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী হাসপাতালের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ও জরুরী পরিবহন কাজেও নিয়োজিত আছে।

লেখক ও কলামিস্ট