কক্সবাজারের টেকনাফে পঙ্গপাল সদৃশ পোকার হানা, আতঙ্কে কৃষকরা - Southeast Asia Journal

কক্সবাজারের টেকনাফে পঙ্গপাল সদৃশ পোকার হানা, আতঙ্কে কৃষকরা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্ব যখন টালমাটাল, টিখ তখনই সমুদ্র শহর কক্সবাজারের টেকনাফে দেখা দিয়েছে পঙ্গপাল সদৃশ পোকার উৎপাত। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লম্বরী গ্রামের একাটি বাড়ির বাগানে পঙ্গপালের মতো ছোট পোকা গাছপালা খেয়ে ফেলছে। শত শত পোকা দল বেঁধে গাছের পাতা ও শাখায় বসে একের পর এক গাছের পাতা খেয়ে নষ্ট করছে। এ ঘটনায় বাড়ির মালিক সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। আর পোকার এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে ছবি তুলে কৃষি গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লতা পাতা, আগাছা থেকে শুরু করে শুকনো পাতা, কাঁচা পাতা ও গাছের শাখা-প্রশাখায় সারি সারি পোকা। কোথাও গাছের শাখা আছে পাতা নেই। আবার কোথাও পাতা ঝলসে গেছে। কোথাও পাতায় পোকায় খাওয়ার মত ছিদ্রযুক্ত। একটি গাছের নিচে রয়েছে কিছু ছাই। যা কিনা আগুন জ্বালিয়ে পোকা দমনের চেষ্টা করেও সরানো যায়নি।

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লম্বরী গ্রামের সোহেল সিকদার জানান, গত কয়েকদিন ধরে ভিটের আম গাছের অবস্থা দেখতে গিয়ে তিনি দেখেন শত শত পোকা। আম গাছ, তেরশল গাছসহ অন্য বেশকটি গাছের পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও শাখা ছাড়া কোনো পাতা নেই।আবার কোথাও কোথাও পাতা ঝলসে গেছে। তবে দিন দিন পোকার সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি পোকাগুলোর মধ্যে পাখাও দেখা যাচ্ছে। একটা আম গাছের নিচে ঝোপঝাড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার চেষ্টা করেও কাজ হয়নি। দিন দিন পোকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব পোকা দেখতে পঙ্গপালের মতো। তিনি উপায় না দেখে পোকার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

তবে টেকনাফে দেখতে পাওয়া পোকাগুলো পঙ্গপাল নয় বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম স্থানীয় সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, টেকনাফের ওই পোকার নমুনা সংগ্রহ করে ভিডিও করে বুধবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মো. রুহুল আমিন ও দেবাশীষ সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ফোনে জানিয়েছেন, এটা মরুভূমির যে পঙ্গপাল, সে পঙ্গপাল না। এটা ঘাসফড়িংয়ের একটি প্রজাতি হতে পারে। এসময় কুরিয়ার সার্ভিসের সমস্যার কারণে পোকাটির নমুনা গাজীপুর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পাঠানো যায়নি বলেও জানান তিনি।

কালো রঙের ডোরাকাটা এই পোকাগুলো দেখতে অনেকটা পঙ্গপালের মতো বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন। পোকাগুলোর ছবি দেখে অধ্যাপক রুহুল আমিন ধারণা করছেন, এগুলো স্খিস্টোসার্কা গ্রেগারিয়া প্রজাতির পঙ্গপাল। যেগুলো বেশ বিধ্বংসী হয়ে থাকে। নতুন ছোট প্রজাতির এই পোকাগুলো যদি পঙ্গপাল হয়ে থাকে এবং সেগুলো যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে সামনে বড় ধরণের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তিনি। টেকনাফে দিন দিন এই পোকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ারে স্থানীয়রা বেশ উদ্বেগের মধ্যে আছেন।

অন্যদিকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে টেকনাফে দেখা পাওয়া পোকাই পঙ্গপাল হতে পারে। দুই থেকে ছয় মাসের মধ্যে এরা পাল তৈরি করে হানা দেবে দেশের নানা প্রান্তে, এদের এখই দমন করা না গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। তিনি আরও জানান, পঙ্গপাল মিয়ানমার বা ভারতের মণিপুর থেকে আসতে পারে। পঙ্গপাল দমনে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

কীটবিজ্ঞানীরা জানালেন, এখনই দমানো না গেলে দুই থেকে ছয় মাসের মধ্যে দেশজুড়ে ফসলের খেতে তাণ্ডব চালাবে। কক্সবাজারের টেকনাফে কৃষক সোহেলের বাগানে প্রথম পঙ্গপালের দেখা মেলে।

তবে পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আভাস দিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. আবদুল মুঈদ। তিনি বলেছেন, ‘স্থানীয়ভাবে টেকনাফের ছোট একটি জায়গায় কিছু কিছু বনজ গাছের ওপর তারা অবস্থান করে পাতা খাচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা স্প্রে করেছি তাতে নকডাউন ইফেক্টে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তাহলে আমাদের টিম যাচ্ছে, আশা করছি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।