ভাষানচর যাচ্ছে রোহিঙ্গারা, সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় জাতিসংঘ - Southeast Asia Journal

ভাষানচর যাচ্ছে রোহিঙ্গারা, সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় জাতিসংঘ

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

কক্সবাজারের উখিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মাঠ হয়ে বিশেষ নিরাপত্তায় স্বেচ্ছায় ভাসানচর যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের নিয়ে চট্টগ্রাম গেছে ২০টি বাস। বৃহস্পতিবার ( ৩ ডিসেম্বর ) সকাল ১১টার সময় ২০ বাসে রোহিঙ্গা নিয়ে রওনা হতে দেখা গেছে। জানা গেছে, প্রতিটি বাসে ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম দিনে ১শ পরিবার স্বেচ্ছায় ভাষানচরে যেতে চট্টগ্রাম গেলো। পর্যায়ক্রমে লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের৷

বিশ্বস্থ সুত্র জানায়, স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা পরিবারকেগুলোকে গত ২রা ডিসেম্বর বুধবার রাতে এবং ৩রা ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্যাম্প থেকে নিয়ে উখিয়া কলেজ মাঠে একত্রিত করা হয়। সেখান থেকে এই পর্যন্ত ২০টি বাস ভাসানচরে উদ্দেশে রওনা দিলেও আরও ১০টিও অধিক বাস সেখানে রয়েছে৷ ওই বাসগুলো রোহিঙ্গাদের যে কোনো সময় রওনা দিতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে উখিয়া ক্যাম্প থেকে তাদের চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নেয়া হচ্ছে। সেখান থেকে শুক্রবার তাদের ভাসানচরে নেয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, প্রথম দফায় প্রায় ১শ’ রোহিঙ্গা পরিবারকে স্থানান্তর করা হবে। ভাসানচরে যেতে আগ্রহীদের কক্সবাজার থেকে করোনা পরীক্ষা করিয়ে বাসযোগে চট্টগ্রাম আনা হবে। সেখান থেকে নৌ বাহিনীর জাহাজে ভাসানচর যাবেন মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে র‌্যাব। কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা; শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শুক্রবার ভাসানচরে যাচ্ছেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা। এর মধ্য দিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্প হিসেবে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ভাসানচরের। স্বেচ্ছায় স্থানান্তরে রাজি হওয়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নিয়ে যেতে প্রস্তুত নৌবাহিনীর ১২টি ও সেনাবাহিনীর একটি জাহাজ। এরই মধ্যে ভাসানচরে মজুদ রাখা হয়েছে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী। ভাসানচরে প্রথম ধাপে যাওয়া রোহিঙ্গাদের রাখা হবে ৫ থেকে ১১ নম্বর ক্লাস্টারে। ৩ মাসের মজুদ সক্ষমতার খাদ্য গুদামে প্রস্তুত ৬৬ টন খাদ্যপণ্য। তবে প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করবে আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার।

সূত্র আরো জানায়, ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১ হাজার ৪৪০টি ঘর এবং ১২০টি সাইক্লোন সেন্টারে থাকতে পারবেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৬০ জন রোহিঙ্গা। পাবেন খাদ্য, চিকিৎসা। এমনকি শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের এদেশে সাময়িক অবস্থান যেন আরো শোভন হয়, সে চেষ্টার কমতি করেনি সরকার। তাই ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করে ভাসানচরে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল আশ্রয়ণ প্রকল্প। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জীবনযাপন নির্বিঘ্ন করতে আগেই ভাসানচরে পৌঁছেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় আড়াইশ সদস্য এবং ২২ এনজিও’র কর্মকর্তারা। প্রথম দলের বসবাস শুরুর পর কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা মিয়ানমারের বাকি নাগরিকরাও ভাসানচরে আসতে আগ্রহী হবেন বলে মনে করেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।

এদিকে, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা নির্ভর হবে বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার তাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি এই প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে। গত ২রা ডিসেম্বর বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলে জাতিসংঘ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ভাসান চরে প্রারম্ভিক স্থানান্তরের কাজ আগামী কিছুদিনের মধ্যে শুরু করার সম্ভাবনা বিষয়ক প্রতিবেদন সম্পর্কে জাতিসংঘ অবগত রয়েছে।’ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে নিরাপদ, স্বেচ্ছা-নির্ভর, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্থায়ী প্রত্যাবাসনসহ তাদের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ কাজ করে চলেছে। ‘বাংলাদেশের সরকার এবং এদেশের জনগণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা এবং আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে যে উদারতা এবং মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় দিয়েছে তার জন্য জাতিসংঘ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচাতে যে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে তাতে অংশীদারিত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি অটুট রয়েছে।’

অন্যদিকে এবিষয়ে বৃহস্পতিবার একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভাসানচরে কাউকে জোর করে নেয়া হচ্ছে না। যারা সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন, তাদেরই কেবল স্থানান্তর করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, ভাসানচরে গেলে এনজিওগুলোর লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে এ ভয়ে অনেকেই যাচ্ছে না। অনেকে মনে করে তাদের সুযোগ সুবিধাও কমে যাবে। আসলে এমন কিছুই না, ভাসানচরে আরও অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে হয়েছে তাদের জন্য। যারা যাচ্ছে সেখানে, আমি কাউকেই জোর করে নিয়ে যাচ্ছি না। যারা যাচ্ছেন স্বেচ্ছায় যাচ্ছেন। এ সময় জাতিসংঘকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে স্বচ্ছ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার সরকারে অব্যাহত দমন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। সে থেকেই তারা বাংলাদেশে সরকারের আশ্রয়ে রয়েছে।