ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনঃ দুই বছরে রোহিঙ্গা কমেছে ৭৭ হাজার!
 
নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতার কারণে কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। তবে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় ঢল নামে ২০১৭ সালের আগস্টে। সে সময় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্যাম্পে ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছিল, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখ ৩২ হাজার। শুধু ইউএনএইচসিআর নয়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ লাখ ৫৭ হাজার রোহিঙ্গার হিসাব দিয়েছিল বিভিন্ন ক্যাম্পে জরুরি সহায়তার কাজে থাকা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত গ্রুপ ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপও (আইএসসিজি)।
এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যায়নি। এ সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্ম নিয়েছে প্রায় পৌনে এক লাখ শিশু। সে হিসাবে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আরো বাড়ার কথা। অথচ সম্প্রতি প্রকাশিত ইউএনএইচসিআরের এক প্রতিবেদন বলছে, গত দুই বছরে বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উল্টো কমেছে ৭৭ হাজার ৫১৪ জন। ‘২০১৯ ইয়ার-এন্ড রিপোর্ট’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৮২০ জন। যদিও ২০১৮ ও ২০১৭ সালের হিসাবে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৯ লাখ ৬ হাজার ৬৯০ এবং ৯ লাখ ৩২ হাজার ৩৩৪।
রোহিঙ্গার সংখ্যা না বেড়ে কমার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনএইচসিআরের একাধিক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, ২০১৭ সালে যে ৯ লাখ ৩২ হাজার রোহিঙ্গার হিসাব দেয়া হয়েছিল সেটা বায়োমেট্রিক গণনার মাধ্যমে দেয়া হয়নি। সে সময় ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গার সংখ্যা গণনায় ‘পরিবার মেথড’ ব্যবহার করেছিল। একেকটি পরিবারে ৫-১০ জন থাকতে পারে এমন ধরে নিয়ে গড় হিসাব করা হয়েছিল। কারণ অনেকেই দুর্গম এলাকায় ছড়িয়ে গিয়েছিল। ওই গণনায় এমন অনেক ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, যারা একই সঙ্গে তিন থেকে পাঁচ জায়গায় নাম নিবন্ধন করেছে। তবে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন শুরু করে ইউএনএইচসিআর। এ সময় প্রত্যেককেই ডিজিটাল আইডেনটিটি দেয়া হয়েছে। তখন একই ব্যক্তি একাধিকবার গণনায় আসার সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যায়। ওই বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৪ হাজার। যা আগেরগুলোর থেকে নির্ভুল। বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের বড় সংখ্যায় স্থানান্তরের বেলায় সংখ্যার এ পার্থক্য বড় কিছু নয়।
এদিকে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গার ঢল নামার পর আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশে ২০১৮ সালে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নেবে বলে তথ্য দিয়েছিল। আর ইউনিসেফের তথ্য বলছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন গড়ে ৬০টি রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে। সে হিসাবেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ার কথা এখন।
নতুন জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের পরিসংখ্যানের আওতায় আনার বিষয়ে ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, অল্প বয়সী শিশুদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় আনা না হলেও তাদের ট্র্যাকিং রাখা হচ্ছে। কোনো রোহিঙ্গা নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে চিকিৎসা নিতে এলেই তাকে একটি ডাটা কার্ড দেয়া হয়। পরবর্তী চিকিৎসার জন্য যেটা তাকে সঙ্গে রাখতে হয়। এভাবে নতুন জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদেরও তথ্য রাখা হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের প্রকৃত সংখ্যা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রথম দিকে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম তথ্য দেয়া হয়েছিল। পাসপোর্ট অধিদপ্তরও একটা জরিপ করেছিল। তবে বায়োমেট্রিক না হওয়ায় একই লোক কয়েকবার গণনার আওতায় পড়েছিল। অনেকে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে গিয়েও দ্বিতীয়বার নিবন্ধিত হয়েছিল। সে কারণে আগের তথ্যে অনেক অসংগতি ছিল। তবে সরকার ও ইউএনএইচসিআর মিলে যৌথভাবে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করার পর সর্বশেষ হিসাবে প্রকৃত তথ্য এসেছে।
