ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু-১ উদ্বোধন
নিজস্ব প্রতিবেদক
অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলার প্রানকেন্দ্র মহামুনি এলাকায় ফেনী নদীর উপর নির্মিত বাংলাদেশ- ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর উদ্বোধন করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে ভিডিও কন্ফারেন্সে যুক্ত হয়ে আজ মঙ্গলবার (৯ মার্চ) দুপুর ১২টার পর সেতুটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তবে সেতুটির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সেতুস্থলে দুই দেশের কোথাও আনুষ্ঠানিক কোন কর্মসূচি রাখা হয়নি।
এর একদিন আগে গত ৭ মার্চ রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে ‘মৈত্রী সেতু’। এদিকে একই সময়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুমে একটি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। যা দু’দেশের মধ্যে পণ্য ও যাত্রী চলাচল সহজ করে তুলবে।
গনভবন থেকে ভিডিও কন্ফারেন্সের মাধ্যমে মৈত্রী সেতু উদ্বোধনকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী ও ত্রিপুরাবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন- মৈত্রী সেতুটি আমাদের দু’দেশের মাঝে শুধু সেতুবন্ধনই রচনা করবে না, বরং ব্যবসা, বানিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। তিনি আরো বলেন, ত্রিপুরাবাসী শুধু চট্টগ্রাম পোর্ট নয়, চট্টগ্রাম আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরও ব্যবহার করতে পারবেন।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সল জানান, সেতুটির উদ্বোধনের ফলে দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করবেন এমন একটি চিঠি আমরা সোমবার রাতে পাই তবে সেতুস্থলে কোন আনুষ্ঠানিকতার তেমন কোন নির্দেশনা ছিলোনা।
রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারী জানান, দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি রামগড়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ উদ্বোধন করেছেন। সেতুটির উদ্বোধন হলেও কার্যক্রমে আরও আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে।
রামগড় পৌরসভার মেয়র কাজী মোহাম্মদ শাহজাহান (রিপন) জানিয়েছেন, ফেনী নদীর উপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু ও রামগড় স্থল বন্দরটি ভবিষ্যতে দুদেশের মানুষেরই অর্থনৈতিক মুক্তির দ্বার হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক তথা রামগড়-সাব্রুম সু-সম্পর্কের যে ইতিহাস রয়েছে তা এই স্থল বন্দর ও মৈত্রী সেতুর মাধ্যমে আজীবন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েস এন্ড ইনফ্রাষ্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এর তত্ববধানে ৮২.৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৮৬ একর জমির উপর ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪.৮০ মিটার প্রস্তের মূল সেতুটির দৈঘ্য ১৫০ মিটার মুলে কাজ শুরু করে, যা ৫ জানুয়ারী ২০২১ সালে শেষ হয়। সেতুটিতে মোট পিলার রয়েছে ১২টি, এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে ৮টি ও ভারতের অংশে ৪টি। স্প্যান রয়েছে ১১টি। তন্মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ৩৩.৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি, ২৭.৫ মিটারের ৪টি ও ৫০ মিটারের একটি। নদীর ওপর ৮০ মিটারের একটি, ভারতের অংশে ৫০ মিটারের একটি ও ২৭.৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি স্প্যান রয়েছে। আর্ন্তজাতিক মানের সেতুটি যুক্ত হয়ে রামগড়-বারৈইয়ার হাট-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে, অপরদিকে ভারত অংশে নবীনপাড়া-ঠাকুরপল্লী হয়ে সাব্রুম-আগরতলা জাতীয় সড়কসহ রেলপথ যুক্ত হবে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাথে বৈঠকে রামগড়-সাব্রুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ৬ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফেনী নদীর ওপর নির্মাণাধীন বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন।