পর্দা উঠলো বইমেলার
 
নিউজ ডেস্ক
অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় চলার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
‘অমর একুশে বইমেলা’ উপলক্ষে দেয়া বাণীতে জ্ঞানচর্চা ও পাঠচর্চা বিস্তারে বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষা-আন্দোলনের হাত ধরেই আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। নানা লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভাষার সংগ্রাম পরিণত হয়েছিল আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রাম। এজন্য অমর একুশে আমাদের শেকড়ের সন্ধান দেয়। বাংলা ভাষা আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা কারাগারে থেকেই ভাষা আন্দোলনে বিভিন্ন নির্দেশনা দিতেন। তার সম্পর্কে তৎকালীন গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও তা উল্লেখ আছে। বঙ্গবন্ধুর লেখা বিভিন্ন বই পড়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব বইয়ে জনগণকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস এবং ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানা যাবে।
করোনাভাইরাস কারণে ভাষার মাসের পরিবর্তে স্বাধীনতার মাসে এবার শুরু হলো ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১’। বাঙালির প্রাণের এই মেলা চলবে ১৪ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রী এসময় তার বক্তব্যে আরো বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও বইমেলা আয়োজিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি আয়োজক সংস্থা- বাংলা একাডেমি, দেশি-বিদেশি প্রকাশক এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।
তিনি বলেন, ‘এবারের বইমেলার মূল উপজীব্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করছি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২১ উৎসর্গিত হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশে। এবারের বইমেলার মূল থিম ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী’।
এ সময় অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’-এর ইংরেজি অনুবাদ ‘নিউ চায়না-১৯৫২’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হবে। এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গায়।
এবার মেলার পরিসর গেলো বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ১৫ লাখ বর্গফুট আয়তনে বিস্তৃত এ আয়োজন। বৃষ্টি হলে বইপ্রেমীদের আশ্রয় দিতে মেলাপ্রাঙ্গণে তৈরি করা হয়েছে ৪টি শেড। প্রথমবারের মতো রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনেও করা হয়েছে একটি নতুন গেইট। মেলার সব প্রবেশপথেই থাকছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। ক্রেতা-বিক্রেতা, লেখক, দর্শনার্থী সবারই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারে মেলায় সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা জানিয়েছেন প্রকাশকরাও।
একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিট; মোট ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৩টি প্যাভিলিয়ন থাকবে।
বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে। সেখানে ১৩৫টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ৫টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৪০টি স্টল দেওয়া হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে।
বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন, শিশু কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর ১টি স্টল থাকবে। এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে ‘শিশুপ্রহর’ থাকছে না।
এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব প্রান্তে নতুন একটি প্রবেশ পথ করা হয়েছে। প্রকাশকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল রমনা প্রান্তে একটি প্রবেশ পথ ও পার্কিং-এর ব্যবস্থা করা। এবার এটা করা সম্ভব হয়েছে। সবমিলে সোহরাওয়ার্দীতে ৩টি প্রবেশ পথ ও ৩টি বাহির পথ থাকবে। প্রত্যেক প্রবেশ পথে সুরক্ষিত ছাউনি থাকবে, যাতে বৃষ্টি ও ঝড়ের মধ্যে মানুষ আশ্রয় নিতে পারেন। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
বইমেলা ১৯ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
