রাঙামাটিতে কর্মহীন অর্ধলাখ মৎস্যজীবী - Southeast Asia Journal

রাঙামাটিতে কর্মহীন অর্ধলাখ মৎস্যজীবী

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রাঙামাটি শহরের পাশে কাপ্তাই হ্রদের একটি দ্বীপের নাম জালিয়া পাড়া। এ দ্বীপে বসবাস করে প্রায় ২৮০ জেলে পরিবার। একটা সময় হ্রদে জাল ফেলে নৌকা ভাসিয়ে শুরু হতো তাদের দিন। আর সন্ধ্যা বেলা নৌকা ভরে মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরতো তারা। সে মাছ বাজারাজাত করে আনন্দ কেটে যেত তাদের সংসার। কিন্তু এখন পুরাই ভিন্ন চিত্র। অভাব যেন তাদের পিছু ছাড়ে না। ছেলে-মেয়েদের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে হ্রদ পাড়ে বসে কাটে দিন।

মৎস্যজীবি জগদীস দাস দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার করে চালাচ্ছেন জীবন ও জীবিকা। মাছ বিক্রি করে চলে তার সংসার। তবে বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকার কারণে বেকার সময় কাটছে দিন। একই অভিযোগ কমলা দাস ও বিফলা দাসের। তারাও জানান, কর্ম নেই। তাই টাকাও নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে। কখনো খেয়ে, আবার কখনো না খেয়ে কাটছে দিন। খেতে না পেয়ে মানুষের বাসা বাড়িতে যে ঝিয়ের কাজ করবো সে সুযোগও নেই। করোনার কারণে মানুষ এখন আগের মতো বাসা-বাড়িতে কাজের লোক রাখে না। শুধু রাঙামাটির জালিয়া পাড়া নয়, এমন দুর্দশার চিত্র এখন রাঙামাটি জেলার প্রায় ৮টি উপজেলায়।

জানা গেছে, বর্তমানে রাঙামাটিতে কর্মহীন রয়েছে অর্ধ লাখ মৎস্যজীবী পরিবার। গত ১ মে কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও বংশ বিস্তারে লক্ষ্যে সব ধরনের মাছ শিকার ও আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর বেকার হয়ে পড়ে তারা। বিকল্প কোনো পেশা বা কর্মসংস্থান না থাকায় জেলে ও শ্রমিকসহ মাছের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলো মধ্যে চরম আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি হিসেবে রাঙামাটিতে ২৫ হাজার ২৯টি মৎস্যজীবী পরিবারের কথা উল্লেখ থাকলেও অনিবন্ধিত রয়েছে প্রায় অর্ধ লাখ জেলে পরিবার। এমনটা দাবি সংশ্লিষ্টদের। নিবন্ধিত মৎস্যজীবী পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে ভিজিএফ কার্ডে মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও, সুবিধাবঞ্চিত রয়েছে অনিবন্ধিত জেলে পরিবারগুলো। ফলে অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। অনিশ্চত হয়ে পড়েছে ছেলে-মেয়েদের ভবিষৎ। টানাপড়েনের মধ্যে কাটছে তাদের জীবন।

অন্যদিকে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে ১ আগস্ট থেকে মাছ শিকার শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আর হচ্ছে না। হ্রদে পানি কম থাকায় মাছ শিকার বন্ধ থাকবে আগামি ১০ আগস্ট পর্যন্ত। বুধবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে বিএফডিসির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেন জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান ।

তবে বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে, তিন মাস বন্ধকালীন রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণের সাথে জড়িত দরিদ্র জেলে পরিবাগুলোকে খাদ্যশস্য বরাদ্ধ দিয়েছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের রাঙামাটি জেলা ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার এম. তৌহিদুল ইসলাম (ট্যাজ) জানান, সাধারণত তিন মাসের মাথায় খুলে দেওয়া হয় কাপ্তাই হ্রদ। কিন্তু এবার কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় মাছ শিকার করা সম্ভব না। কারণ কম পানিতে মাছ শিকার করলে প্রজনন নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বন্ধকালীন সময়টা বাড়িয়ে আগামি ১০ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে পানি না বাড়লে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বন্ধকালীন সময় আরও দীর্ঘ করা হবে।